আমরা উল্টো পথে হাঁটছি নাতো!

মুহাম্মদ মহরম হোসাইন::
গোটা বিশ্ব করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ আক্রান্ত। করোনার ছোবলে দিশেহারা মানুষ। ভয় আর আতঙ্ক পেয়ে বসেছে পৃথিবীর মানুষকে। যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তারা মৃত্যুর ভয়ে ভীত, আর যারা আক্রান্ত হন নি তারা আক্রান্ত হবার ভয়ে ভীত। এ ভয়ের কারণে মানুষের চোখে ঘুম নেই। এখন চিন্তায় অস্থির মানুষের মন। মানুষ কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মরছে। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য মূল্যবান প্রাণ। যেখানে উন্নত বিশ্বের এই অবস্থা, সেখানে অনুন্নত দেশগুলোর কি অবস্থা হবে তা ভাবতে গা শিঁউরে উঠে। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ রোগী সনাক্ত হওয়ার পর গত ২৬ মার্চ থেকে দেশব্যাপী চলছে লকডাউন (সাধারণ ছুটি)। কোভিড-১৯ আবিস্কারের ৬০ তম দিন অতিবাহিত হতে চলছে। এর মধ্যে সামাজিক বিস্তৃতি ঘটেছে কোভিড-১৯ এর। দিন দিন জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলছে আক্রান্ত ও নিহতের সংখ্যা। কে কখন করোনা ভাইরাসের জীবানু বহন করছেন এটা বলা মুশকিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৫০ দিন পর থেকে কোভিট-১৯ ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। আমাদের দেশে ও নিশ্চয়ই এর ব্যতিক্রম ঘটবেনা। এ করোনার পরিস্হিতিতে যেখানে আমাদের সাবধান হওয়ার কথা, ঘরে থাকার কথা, সেখানে আমরা দিন দিন হয়ে যাচ্ছি বেপরোয়া। বের হয়ে আসছি ঘরের বাইরে। এ যেন জমদূতকে দরজা খুলে ঘরে আমন্ত্রণ জানানোর মতন।
একটি মধ্যম আয়ের দেশে সীমিত সামর্থ্যর মধ্যে করোনা মোকাবেলায় প্রথম দিকেই লকডাউনের ঘোষণা, বিভিন্ন সেক্টরে অধিক প্যাকেজ প্রনোদনা প্রদান, খাদ্য উপহার ও টিসিবির পণ্য সরবরাহের সিদ্ধান্ত ছিলো বর্তমান সরকারের একটি সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত। যার কারণে আমাদের দেশে করোনা মহামারী আকার ধারণ করতে পারেনি। আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা কম রয়েছ। এ জন্য বঙ্গকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সত্যি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে আগামী ১০ মে থেকে সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শপিংমল খোলা রাখার সরকারী সিদ্ধান্ত জনমনে নতুন করে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মানুষ স্যোশাল মিডিয়া সমূহে রিঅ্যাক্ট করতে শুরু করেছেন। এর আগেও সরকারের পক্ষ থেকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় বিজিএমইএ গার্মেন্টস বন্ধ খোলা নিয়ে অসহায় কর্মীদের সাথে ইঁদুর বিড়াল খেলা করেছেন। এতে অনেক কর্মী শারিরীক, মানুষিক অবশাদে ভুগেছেন। অনেকে কাজে যোগদান করে করোনায় হয়েছেন পজেটিভ।
শপিংমল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে সচেতন জনমনে একাধিক প্রশ্ন শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে? করোনার কারণে সরকার যেখানে লোকসমাগম ঠেকাতে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যগডা বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছেন। যেখানে মুজিববর্ষের সকল অনুষ্ঠান, ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ উৎযাপন করা হয়নি। তাহলে কেন আবার হঠাৎ করে শপিংমল খোলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? এছাড়া পরিবহন শ্রমিকদের অন্নের দাবীতে বিক্ষোভ, সারাদেশে হতদরিদ্রদের ত্রাণের জন্য আর্তনাদ, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক ছাটাঁই, বেতন বন্ধ ও অধিকাংশ শ্রমজীবি মানুষের নুন আনতে পানতা ফুরোই’, তাহলে কাদের জন্য এ ঈদ বাজারের মার্কেট? এছাড়া শপিংমলে যে স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষা দেয়ার কথা বলা হচ্ছে তা ঢাকা চট্টগ্রাম সহ সারা বাংলাদেশের শপিংমল কতৃপক্ষ কতটুকু দিতে সক্ষম হবেন? স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষা বদলে শপিংমল গুলোতে বিপুল লোকসমাগমের কারণে সংক্রমন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। সরকারকে ভাবা উচিত করোনার এই মুহুর্তে শপিংমল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া মানে, আমরা উল্টো পথে হাঁটার মত! তহলে এতদিন ঘরে লকডাউনে থাকার সুফলটিও কি কোন কাজে আসবে?
এদিকে শপিংমল খুলে দেয়া সরকারের একটি অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সচেতন মহল। যার খেসারত অচিরেই জনগণকেই ভোগ করতে হবে।” এমনটাই ধারণা তাদের। তাই এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করতঃ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রনোদনার সুযোগ করে দেওয়াই হবে সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। দূরদর্শী সরকার প্রধানের নিকট এমনটাই আশা করছে দেশের জনগণ।
লেখকঃ মুহাম্মদ মহরম হোসাইন
সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও নিবার্হী সদস্য, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।