শুভ জন্মদিন মুনীর চৌধুরী

মুনীর চৌধুরী। তিনি ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবী। তাঁর পুরো নাম আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর মানিকগঞ্জ শহরে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলায়।

পিতা খানবাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। ১৯৪১ সালে মুনীর চৌধুরী ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বিএ অনার্স (১৯৪৬) ও এমএ (১৯৪৭) পাস করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলায় এবং ১৯৫৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।

মুনীর চৌধুরী খুলনার ব্রজলাল কলেজে (বিএল কলেজ) অধ্যাপনার (১৯৪৭-৫০) মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ (১৯৫০) এবং শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও বাংলা বিভাগে (১৯৫০-৭১) অধ্যাপনা করেন।

কর্মজীবনের শুরুতে ১৯৪৭ সালে তিনি খুলনার ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি শিক্ষা ও পেশাগত জীবনে বামপন্থী রাজনীতি ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির হত্যাকাণ্ড এবং পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সভায় তীব্র ভাষায় বক্তব্য দেন। এ কারণে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাঁকে কারাবন্দি করে। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি জেলে থাকেন এবং বন্দি অবস্থায়ই তাঁর শ্রেষ্ঠ নাটক ‘কবর’ (১৯৫৩) রচনা করেন।
তাঁর রচিত নাটকের মধ্যে ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ (১৯৬২), ‘চিঠি’ (১৯৬৬), ‘কবর’ (১৯৫৩), ‘দণ্ডকারণ্য’ (১৯৬৬), ‘পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য’ (১৯৬৯) উল্লেখযোগ্য। তিনি ‘কেউ কিছু বলতে পারে না’ (১৯৬৯), ‘রূপার কৌটা’ (১৯৬৯), মুখরা রমণী বশীকরণ’সহ (১৯৭০) বেশ কিছু অনুবাদ নাটক লিখেছেন।

এ ছাড়া ‘ড্রাইডেন ও ডিএল রায়’ (১৯৬৩), ‘মীর মানস’ (১৯৬৫), ‘বাংলা গদ্যরীতি’ (১৯৭০) প্রভৃতি প্রবন্ধও লিখেছেন।
তিনি ১৯৬৫ সালে ‘মুনীর অপটিমা’ নামে বাংলা টাইপ রাইটারের কি-বোর্ড (১৯৬৫) উদ্ভাবন করেন।

গুণী মানুষটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগীদের দ্বারা অপহৃত ও নিহত হন।