আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও শ্রেণিপেশার সঙ্গে আলোচনা শুরুর দাবীতে সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার বিক্ষোভ।
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি ও সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা শুরুর দাবীতে আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪.০০ টায় সিনেমা প্যালেস চত্বরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও লাল পতাকার মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সিপিবি, চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অশোক সাহা’র সভাপতিত্বে এবং জামাল উদ্দীনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, শ্রমিক নেতা মছি-উদ দৌলা, সিপিবি কোতোয়ালী থানার সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, যুব নেতা রাশিদুল সামির প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, স্বৈরাচারী শাসকের অবসানের পর দেশবাসী স্বৈরাচারী ব্যবস্থাকে উৎখাত করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে অন্তর্বতীকালীন সরকার ক্ষিপ্রতার সাথে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, অস্থিরতা দূর করে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা এবং নির্বাচন ব্যবস্থা আমূল সংস্কার করে নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা করার বিষয়ে জনগণকে এখনো স্পষ্ট করেনি। বরং দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজার ও মন্দিরে হামলা হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় ‘মব’ তৈরি করে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গাইবান্ধা, রাজশাহীতে যেভাবে পিটিয়ে ছাত্র-যুবদের হত্যা করা হলো, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের, হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে অন্তর্বতীকালীন সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান হচ্ছে না। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের নামে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে নিয়মিত বাহিনীকে নিয়ে ও সংস্কার করে কাজে লাগানো দরকার সেখানে এই ধরনের পদক্ষেপ জনমনে নানামুখী প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, গণঅভ্যুত্থানের কোন দল বা গোষ্ঠী বিজয়ী হয়নি, অথচ দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে দখলদারী, চাঁদাবাজির হাত বদল হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় বিতর্কিতদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যেমন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যিনি অতীতে ঘাতকদের পক্ষের আইনজীবী ছিল। যা দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সংবিধান সংস্কারের জন্য একজনকে দায়িত্ব প্রদানের কয়েকদিনের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কে বাদ দিয়ে অন্য একজনকে যেভাবে যুক্ত করা হয়েছে তা মোটেই সমীচীন নয়। এসব ঘটনা সরকারের অস্থিরতাকেই সামনে নিয়ে আসছে। তাই অবিলম্বে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও রাজনৈতিক দল সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা এবং কালক্ষেপণ না করে বিশেষভাবে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের আলোচনা শুরুর আহ্বান জানানো হয়। সর্বত্র নীতিমালা তৈরি এবং দল নিরপেক্ষ দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ এবং বিতর্কিতদের অপসারণের দাবি জানান হয়।
বক্তারা বলেন, দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এখনো নিয়ন্ত্রণহীন। তাই অনতিবিলম্বে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। বিদেশে পাচারকৃত টাকা দ্রুত ফেরত আনা, ঋণখেলাপীদের কাছ থেকে টাকা আদায়সহ দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা গ্রহন করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় স্বৈরাচারী ব্যবস্থার উচ্ছেদ ও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।