স্বৈরাচারের দোসররা উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, ঐক্যবদ্ধ থাকুন: সেলিমা রহমান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, ভারতে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা চুপচাপ বসে নেই, বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে। স্বাধীনতা পেলেও আন্দোলন আমাদের চলমান রয়েছে। কারণ এখনো স্বৈরাচারের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা এবং ঘেরাও করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, ভারত কোনো আগাম সতর্কবার্তা ছাড়াই ফারাক্কা বাঁধ খুলে দিয়ে উত্তরাঞ্চলকে বন্যা ভাসিয়ে দিয়েছে। প্রতিবেশী দেশ বিভিন্নভাবে তাদের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে। এজন্য বিভেদ নয়, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

আজ শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত পরিবারের মাঝে জিয়া প্রজন্ম দলের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান ও আলোচনা সভায়’ প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব বলেন।

সেলিনা রহমান বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাংলাদেশের ছাত্র জনত ও রাজনীতিবিদসহ সবাই মাঠে নেমেছিল। কারণ স্বৈরাচার সরকারকে পতন ঘটাতে হবে। গত ১৫ বছর জনগণ কথা বলতে পারেনি। তরুণ প্রজন্ম ভোটার হয়েছে কিন্তু ভোট দিতে পারেনি। বারবার বিনা ভোটে ক্ষমতায় এসে অবৈধ সরকার জনগণের পেটের ওপর লাথি মেরেছে। অত্যাচার নির্যাতন করে ক্ষমতায় টিকে ছিল। ছাত্র জনতাকে নির্মমভবে হত্যা করেছিল শুধুমাত্র ক্ষমতা ধরে রাখতে। হত্যার পর লাশ আগুন পুড়িয়ে দিয়েছে। অনেক শিশু তার বাবাকে হারিয়েছেন। তারা কীভাবে বাঁচবেন?

তিনি বলেন, গত ১৭ বছর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। বহু ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাগেরকে স্যালুট ও নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

সেলিমা রহমান বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সর্বপ্রথমে গ্রেপ্তার নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের ওপর কারাগারে অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ১৭ বছর সরাসরি সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে একের পর এক অপকর্ম করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের নামে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। ব্যাংকগুলোতে লুটপাট চালিয়েছে।

বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখায় রাষ্ট্র সংস্কারে সব প্রস্তাব রয়েছে জানিয়ে বিএনপির এ সিনিয়র নেতা বলেন, এ রূপরেখা থেকে দেড় বছর আগেই দেওয়া হয়েছিল। প্রস্তাবে ছিল একজন দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন এবং জনগণের ভোটে সংসদ নির্বাচিত হবেন। আগামীতে জাতীয় সরকারের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে সেলিমা রহমান বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। জনগত অধিকার নিশ্চিত করার জন্য দরকার একটা নির্বাচিত সরকার। যারা জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। বিএনপি কিন্তু একবারও বলেনি তাদের ক্ষমতায় আনতে হবে। এখন স্লোগান নয়, রাষ্ট্রের গঠনমূলক কাজ করতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরেয়ে এনে সুন্দর ও ভবিষ্যতে বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে সেলিমা রহমান বলেন, খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মারার জন্য কারাগারে স্লো পয়জনিং করা হয়েছিল। আজকে তিনি এতটাই অসুস্থ যে তাকে আড়াই ঘণ্টা বিমানে করে বিদেশে পাঠানোর উপায় নেই। তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন ডাক্তারা। তিনি জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করলেও সরকারের সঙ্গে আপস করেননি। আপস করলে অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন।

আয়োজক দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট পারভীন কাউসার মুন্নির সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মো. সরোয়ার হোসেন রুবেলের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, যুব বিষয়ক সহ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ ও নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন।