কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি: কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনাস্থ রাষ্ট্রায়ত্ব কর্ণফুলী পেপার মিলস (কেপিএম) লিমিটেডের উৎপাদন চালু রাখা ও উৎপাদন বিরোধী যড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মিলের প্রধান ফটকে এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে কেপিএম উৎপাদনে না গেলে কঠোর কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে বলে মানববন্ধন থেকে হুশিয়ারী উচ্চারন করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১ টায় কেপিএম শ্রমিক কর্মচারি পরিষদের (সিবিএ) আয়োজনে কেপিএম ১ নং গেইট সংলগ্ন চত্বরে এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। এতে সর্বস্তরের স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিক কর্মচারি, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসীরা অংশ নেয়। কেপিএম শ্রমিক কর্মচারী পরিষদ, সিবিএ’র সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবু সরোয়ারের সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন সিবিএ’র সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ, মো. তারেক, মো. জসিম, যুগ্ম সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, আব্দুল আজিজ, মো. আলাউদ্দিন, অর্থ সম্পাদক আক্তার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হারুনর রশীদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবুল কাসেম প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০১৭ সাল থেকে তৎকালীন কেপিএমের এমডি ড. এমএ কাদেরের ষড়যন্ত্রে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এই কাগজ কলের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তখন থেকে তিনি কেপিএমের নিজস্ব পাল্প উৎপাদনও বন্ধ করে দেয়, ফলে এতদিন বিদেশি পাল্প এনে মাঝে মধ্যে কখনো ৫ মেট্রিকটন, কখনো ১০ মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদন করে কোন রকমে মিলটি নামমাত্র চালু রাখা হয়েছে। অথচ দৈনিক ১০০ মেট্রিকটন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এই মিলটির ১ ও ২নং পেপার মেশিনে এখনো ৭০ থেকে ৮০ মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া মিলের ৩নং মেশিনটি কারিগরি ক্রুটিজনিত কারনে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। উৎপাদনের সক্ষমতা থাকার পরও ২০১৭ সাল থেকে অদ্যাবদি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মিলটি চলছে। উপরন্তু ২০২২ সালে কারখানার বাজেট কমিয়ে এবং শ্রমিক কর্মচারি কমিয়ে মিলটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। তৎকালীন এমডি এমএ কাদেরের দোসররা মিলে বহাল তবিয়তে থেকে এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এমতাবস্থায় মিলের নিয়মিত উৎপাদন চালু রাখার জন্য সর্বস্তরের শ্রমিক কর্মচারিরা জোর দাবি জানিয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন , কেপিএমের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে প্রাইভেট কোম্পানি গুলো তাদের উৎপাদিত কাগজের দাম বৃদ্ধি করে দিবে, এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। গরীব, দিনমজুর ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। আমরা বিসিআইসির ফেডারেশন নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের সাথে গত ৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রনালয়ে দেখা করেছি। উনি কারখানার উৎপাদন চালু রাখার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহন করেছেন, তার জন্য কেপিএমের সকল শ্রমিক কর্মচারীর পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানানো হয়। এদিকে, কেপিএমের জিএম (উৎপাদন) মো. মঈদুল ইসলামের সাথে বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পাল্প সংকট ও কারিগরি ক্রুটির কারনে গত দেড়মাস ধরে মিলে কোন উৎপাদন হয়নি। আশা করছি আগামী সপ্তাহে আমরা উৎপাদনে ফিরবো। প্রসঙ্গত, আর্থিক সংকটের অজুহাতে ২০১৬ সাল থেকে কয়েক দফায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ কেপিএম থেকে প্রায় ৭০০ দক্ষ জনবল অন্যত্র বদলি করে। ফলে বর্তমানে মিলে দক্ষ জনবলের মারাত্বক সংকট চলছে।