নির্মাণাধীন ভবনে আমনের বীজতলা

বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় নির্মাণাধীন ভবনের মেঝেতে আমনের বীজতলা তৈরি করেছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার মো. রাসেল নামের এক কৃষক। এতে ওই কৃষক বন্যা-পরবর্তী সময়ে ধানের চারার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রাসহ সংশ্লিষ্টরা।

কৃষক মো. রাসেল উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকার মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জাল দিয়ে মোড়ানো চারদিক, মাঝখানে সবুজাভ বীজতলা। বাড়ির গবাদিপশু ও হাঁস, মুরগী থেকে এটিকে সুরক্ষা দিতেই জাল দিয়ে চারদিক মোড়ানো হয়েছে। বাড়ির মাঝখানে এমন কিছু স্থানীয়দের অবাক করেছে। অবশ্য এ ধরনের উঁচু জায়গায় তৈরি করা বীজতলার চারা বন্যা-পরবর্তী সময়ে কৃষকদের কাজে আসবে, এমনটাই বলছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, গোমতী নদী ও সালদা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ফসলি মাঠ তলিয়ে গেছে। এতে পাকা আউশধান, জমিতে রোপণ করা আমন ধানের চারা, শাকসবজি ও আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পানি নেমে গেলে আমন আবাদে ধানের চারার বড় ধরনের সংকট দেখা দেবে। তবে যারা উঁচু জায়গায় বীজতলা তৈরি করেছেন তাদেরটা সুরক্ষিত আছে।

এদিকে উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, গোমতী নদী ও সালদা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বন্যায় প্লাবিত হয়ে এ উপজেলার অধিকাংশ আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে আমন আবাদে চারা সংকট দেখা দেবে। অবশ্য আমন ধানের চারার সংকট কাটাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।

কৃষক মো. রাসেল বলেন, ভাবলাম যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে বন্যাও হতে পারে, আর এমন কিছু হলে পতিত জমিতে বীজতলা তৈরি করলে তা পানিতে প্লাবিত হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ভবনের কাজ আপাতত বন্ধ থাকায় ফ্লোরেই বীজতলা তৈরি করে রাখি। এখনতো ঠিকই আমাদের মতো কৃষকদের বড় ধরনের বন্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। অধিকাংশ বীজতলাই পানিতে তলিয়ে গেছে। মাঠে পানি কমে এলে আমি এই চারা দিয়ে আমন আবাদ করবো।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, উপজেলা সদরের দীর্ঘভূমি এলাকার ওই কৃষকের এমন উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। আমরা সবসময়ই কৃষকদের আমন বীজতলা উঁচু জায়গায় করার পরামর্শ দিয়ে আসছি। যারা এমন কিছু করেছে সেগুলো অক্ষত আছে। বন্যার কারণে বন্যা-পরবর্তী সময়ে আমন আবাদে ধানের চারার সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সে সংকট মোকাবিলায় আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, আমনের বীজতলা বিনষ্ট হওয়ায় আমরা কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। পুনরায় কৃষক পর্যায়ে আমনের কী পরিমাণ বীজ সংগ্রহে আছে সে রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজন অনুযায়ী চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে পুনরায় বীজতলা স্থাপনের জন্য কী পরিমাণ উঁচু জায়গা আছে সেটা আমরা নির্ধারণ করে রেখেছি। এই পরিস্থিতিতে বি আর২২ ও বি আর২৩ এই জাতগুলো বেশ উপযোগী।