চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত কন্টেইনার পানগাঁও বন্দর থেকে খালাসের সুযোগ

জাহেদ কায়সার (চট্টগ্রাম): ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে কারণে সৃষ্ট বন্যায় ডুবেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লার বিভিন্ন অংশ। গত কয়েক দিনে হাজার পণ্যবাহী গাড়ি অলস বসে থাকার পর মহাসড়ক থেকে পানি সরে যাওয়ায় আটকে পড়া গাড়িগুলো শুরু করেছে। তবে সড়কের বেহাল দশায় পণ্যবাহী গাড়ি চলছে অনেকটা কচ্ছপ গতিতে। অন্যদিকে রেলবাহী পণ্য পরিবহনও বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে দেশের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঠিক এ সময়ে বিকল্প নিরাপদ রুট হতে পারে নৌপথের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পানগাঁও টার্মিনাল রুট।

বিষয়টি বিবেচনায় এনে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম নৌপথ ব্যবহার করে দেশের আমদানি/রপ্তানি বেগবান করতে পানগাঁওস্থ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নিয়ম অনুযায়ী চট্টগ্রাম-পানগাঁও রুটে পণ্য পরিবহনের জন্য আগে থেকে ঘোষণা দেওয়ার বিধান থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন চট্টগ্রাম বন্দরে আসা সব কনটেইনারই আমদানিকারকেরা চাইলে পানগাঁও থেকে খালাস নিতে পারবেন। ফলে বন্দরে আটকে থাকা পণ্য খালাস নেওয়ার এটি একটি বড় সুযোগ মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক ও রেলপথে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন অনেক ক্ষেত্রেই ধীরগতিতে হচ্ছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে বন্ধ রাখতে বাধ্য হতে হচ্ছে। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানির গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় এনে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম নৌপথ ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি গতিশীল রাখার লক্ষ্যে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালটি ব্যবহারের জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। আমদানি ও রপ্তানিকারকগণ পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন জাহাজ কোম্পানির পর্যাপ্ত ইনল্যান্ড জাহাজ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সকল ধরনের লজিস্টিকস্ সুবিধা এই কার্যক্রমের জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এমতাবস্থায়, বিজিএমইএ/বিকেএমইএসহ সকল আমদানি/রপ্তানিকারকগণকে আমদানি/রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার পানগাঁও আইসিটি এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর হতে সংগ্রহ/জাহাজীকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা যাচ্ছে । এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হতে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে ।

বন্দর সূত্র জানায় সাড়ে ৩ হাজার একক কনটেইনার ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন এই পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে ২০২৩ সালে ভিড়েছিল ১৪৭ টি পণ্যবাহী জাহাজ। অর্থাৎ গড়ে প্রতিমাসে ১২টির বেশি জাহাজ চট্টগ্রাম-পানগাঁও রুটে চলাচল করতো।
তবে চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন জাহাজ পানগাঁও এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়ায় এবং মেরিন ট্রাস্ট-১ কোলকাতা বন্দরে ডুবে যাওয়ায় এখন এই রুটে ১৯টি জাহাজ চলাচল করে। সে জাহাজ গুলো পানগাঁওয়ে পরিবহন করতে পারবে। তাই বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাসড়কের বর্তমান বেহাল দশা থেকে চট্টগ্রাম-পানগাঁও রুট এখন বেশি নিরাপদ। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমাদানি-রপ্তানি পণ্য পানগাঁওয়ে পরিবহনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ আবেদন জানায়, তাতে ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।