শত শত বছরের ঢাকাবাসীর ইফতার ঐতিহ্য এবার নেই

রমজান এলেই বদলে যায় ঢাকার দৃশ্যপট। দুপুরের পর থেকেই ইফতারকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠে রাজধানী। রাস্তায়, ফুটপাতে, বিভিন্ন তারকা হোটেল ও রেস্টুরেন্টের সামনে বিক্রি হয় বাহারি ইফতার। এমনকি পাড়ার অলিতে-গলিতেও বসে ইফতারের দোকান। ইফতার বিক্রেতারা পসরা সাজিয়ে বসেন। বেলা গড়ায়, বাড়ে ক্রেতার সমাগম। রমজানের এই উৎসব, উচ্ছাস ঢাকাবাসীর ঐতিহ্য। শত শত বছরের এই আনন্দ, উচ্ছাস এবার প্রায় বিলীন।

মরণঘাতি করোনার কারণে এই দৃশ্যপটের দেখা মেলেনি কোথাও। করোনার সংক্রমণ এড়াতে রাজধানীর রাস্তায়, ফুটপাতে ইফতার সামগ্রী বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ।

আজ রমজানের প্রথম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘোরে দেখা গেছে নেই সেই দৃশ্যপট। নেই মানুষের ভিড়। লাইন বেঁধে ইফতার কেনার অপেক্ষা নেই। বিভিন্ন রঙের সামিয়ানা, বাঁশ আর টেবিল বসিয়ে ফুটপাত দখল করে অন্যান্যবারের মতো কোনো দোকান বসেনি। রাজধানীর বিভিন্নস্থান থেকে কেউ ছুটে যাননি বেইলী রোড, চকবাজার ও হাতিরপুর এলাকায়। নবাবী ঘিয়ে ভাজা বোম্বে জিলাপী, রেশমী জিলাপী, নবাবী স্পেশাল ফির্নি, নবাবী ক্ষিরসা, ফালুদা, নবাবী টানা পরোটা, কাশ্মিরী নবাবী পরোটা, চিকেন রেশমী কাবাবসহ চকবাজারের ‘বড় বাপের পোলাই খায়’ কিনতে যাননি কেউ।

মোহাম্মদপুরের রহিম কাবাবের মালিক ইফতারি বিক্রেতা শমসের আলী সুমন জানান, প্রতিবছর জমজমাট আযোজন থাকতো রমজানে। ইফতার কেনার জন্য ঢাকা ছাড়া ঢাকার আশপাশের রোকজন ছুটে আসতেন। এবার রমজানটা একদম ফ্যাকাশে। মানুষের মনে শান্তি নেই। করোনার ভয়ে কেউ বাইরে আসেনা। আমরাও কোনো আয়োজন করিনি। সরকারের নিষেধাজ্ঞাও আছে। সব মিলিয়ে এমন রমজান কখনও দেখেননি সুমন।
প্রতি বছরই ক্রেতা আকর্ষণের জন্য ভিন্ন স্বাদের নতুন নতুন আইটেম তৈরি করতেন বাবুর্চিরা। উত্তরা, শ্যামলী, ধানমন্ডি, মোহামম্দপুরসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মাটন লেগ রোস্ট, গরুর স্পেশাল তেহারি, স্পেশাল ফালুদা, নবাবী বোরহানী, এমনকি হাজির বিরানীরও চাহিদা বেড়ে যেতো। বেলা ৩টা থেকেই জমে উঠতো রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের ইফতারি বাজার। পুরান ঢাকার বাহারি ইফতারের ঘ্রাণ আকৃষ্ট করতো ক্রেতাদের। বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে যেতেন ভোজন রসিকরা। এবার দুপুরের পর থেকেই দেখা গেছে এসব এলাকা প্রায় নির্জন। মাঝে মধ্যে কয়েক রিকশা, প্রাইভেট গাড়ির দেখা মেলে। দুরে দাঁড়িয়ে গুটি কয়েক জন কথা বলছে। নিত্য পণ্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া কোথাও তেমন কোনো দোকান খোলা নেই।

যদিও গুলিস্তানের নবাবপুর রোডে, কাপ্তানবাজারে, যাত্রবাড়ির শহীদ ফারুক রোডে, বিবির বাগিচায়, শ্যামপুওে হাতে গুণা কয়েক ইফতারির দোকান বসেছিলো। পরবর্তীতে পুলিশের কড়াকড়িতে দোকানগুলো সরিয়ে নেয়া হয়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমন প্রতিরোধে রাজধানীর ফুটপাতে সব ধরনের ইফতারসামগ্রী বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ডিএমপির উপ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদুর রহমান জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগরীর রাস্তা বা ফুটপাতে কোনো ধরনের ইফতারসামগ্রী বসতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন কাঁচাবাজার ও সুপারশপে ডিএমপি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে নগরবাসীর সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।