এবার সৌদিয়ায় রমজানের সেই জৌলুস নেই

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ‘লকডাউন’ চলার মধ্যেই মুসলিমদের জন্য ‘পবিত্র রমজান মাস’ শুরু হয়েছে। রমজান রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, অহংবোধ ভুলে গিয়ে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাস হচ্ছে এটি। রমজান মাস হচ্ছে অনাবিল আনন্দের।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের এ মহাদুর্যোগেই সৌদি প্রবাসীদের রমজানের প্রথম রোজা অতিবাহিত হয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে দেশটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ এবং লকডাউন বলবৎ থাকায় অনেক প্রবাসী গৃহবন্দি হয়ে কর্মহীন অবস্থায় দূর্বিষহসহ জীবন অতিবাহিত করছে।

প্রতিবছর রমজানের আগের দিনে প্রবাসীদের অনেক উৎসবমুখর পরিবেশে রোজার আগমনের সাথে সাথে বিভিন্ন ইফতার সামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস খরিদ করতে দেখা যায়। যেমন- বাঙালিরদের ইফতার আইটেমের সর্বজন প্রিয় ছোলা (চনা)। অন্যান্য মনোহরি দ্রব্যাদি যেমন, মুড়ি, চিরা ডাল ইত্যাদি।

এবারের রমজানে আগের সেই উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়নি। তবে গতকাল জেদ্দার গুরাইয়াতে যেখানে বেশিরভাগ প্রবাসী বাংলাদেশিদের আনাগোনা দেখা যায় সেখানে অনেক নিয়ন্ত্রিতভাবে কারফিউ শিথিলের সময় কিছু কিছু প্রবাসীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তথা ছোলা, চিনি, মুড়ি কিনতে দেখা যায় প্রবাসীদের। তবে তা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক হতাশাব্যঞ্জক।

প্রতিবছর দেশটির বিভিন্ন ইফতারির দোকানে রমজানের পড়ন্ত বিকেলে বাহারি ডিজাইনের বিভিন্ন রকমের ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসে থাকা; দোকানির সে জৌলুস আর এই রমজানে চোখে পড়ার মতো নেই। সামান্য কিছু দোকান খোলা থাকলেও অনেকটা নিয়ন্ত্রিতভাবে বিকেল ৫টার পর বন্ধ করে দিতে হয়।

এছাড়াও সৌদি আরবজুড়ে ইফতারির আসর বসে। দেশটি বড় বড় কোম্পানি থেকে শুরু করে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী রোজাদারদের ইফতার করানোর জন্য সবাই আত্মনিয়োগ করে। রমজান মাসে সৌদি আরবের বিভিন্ন মসজিদে তাবু স্থাপন করে রোজাদারদের জন্য ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়। মসজিদ ছাড়া ও রোজাদার আনাগোনা হয় এমন সম্ভাব্য স্থানে, এবারের রমজানে সেই জৌলুস নেই।

প্রতিবছর রমজানে তারারির নামজের সময় এক অনেক উৎসাহ ও আনন্দ নিয়ে মুসল্লিদের মসজিদে যাওয়ার এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হতো; এ রমজানে সে দৃশ্য আর চোখে পড়ার মতো নেই।

প্রবাসীদের প্রতিবছর রমজানে আগে দেশে পরিবার পরিজনের জন্য ব্যাংকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা পাঠানোর যে হিড়িক পড়ত তা কিন্ত এবার দেখা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, নিজের খাওয়ার টাকা শেষ হয়ে আসছে, বাড়িতে কীভাবে পাঠায়? দেশে আত্মীয়-স্বজন থেকে ধার-দেনা করে চলার জন্য বলেছি। জানি না এভাবে আর কতদিন থাকবে?

তিনি বলেন, পরিবারের জন্য এখন সময়টা অনেক হতাশা, দু:খ এবং দুশ্চিন্তার। কেননা পরিবারের কর্তার বেকার হয়ে যাওয়া মানে পুরো পরিবারের উপর এর প্রভাব পড়া। এমন অনেক প্রবাসী আছেন যারা প্রতিনিয়ত এ রকম হতাশা ও দুশ্চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন।

এই মাসে নাজিল হয়েছে পবিত্র কুরআনুল কারীম। এই মাস হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এক রাতের (শবে ক্বদর) মাস, বদর, খন্দকও মক্কা বিজয়ের মাস হলো এই পবিত্র রমজান মাস। এ পবিত্র মাসে মানুষের মাঝে খুশীর ফোয়ার বয়ে যায়। রমজানের আগমনে সমগ্র মুসলিম জাহান নব উদ্যমে জেগে উঠে।

বিচিত্র ধরনের আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যায় আসমান ও জমিনে। সৃষ্টি জগত ভরে উঠে রহমতের ফল্গুধারায়। অচিরেই মহান আল্লাহর অপার কৃপা এবং দয়ায় এ মহামারি শেষ হবে। আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসবে। এ সুন্দর ধরণীতে আবার শুরু হবে কোলাহল পূর্ণ জীবন। কেন না মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেছেন ‘ফা ইন্না মা’য়াল উসরি ইউসারান’ অর্থাৎ নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।