মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি::
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ী ঢল ও ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে ওঠায় কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হালদা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর পানির তীব্রতা আরো বাড়ে। এখানে এখানো কার্যত পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।
শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে পানি ওঠায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা বিভিন্ন যানবহান আটকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঢাকামুখী লেন ব্যবহার করতে না পারায় উদ্ধার কাজেরও বিঘœ ঘটছে।
শুকনো খাবার ও উদ্ধার অভিযানে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবী রায়হান ইসলাম জানান, মিরসরাই এবং ফেনীতে পানিবন্দি মানুষকে সহযোগিতা এবং উদ্ধার কাজে দূর দূরান্ত থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীরা অনেকেই যানজটের কারণে পথেই আটকে রয়েছে।
জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, ধুম ও ইছাখালী ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার দিনান্তের মধ্যে অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে গেলেও বাড়ি-ঘর ফেলে যাননি অসংখ্য মানুষ। পরবর্তীতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বহস্পতিবার বেলা ১২ থেকে এসব এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় উদ্ধার কাজে নানা বিঘœ ঘটছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে বোট নিয়ে এসব এলাকায় উদ্ধার কাজ চালান বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। তারা এসময় শুকনো খাবারেরও ব্যবস্থা করে। ওইদিন দিবাগত রাতে করেরহাট, বারইয়ারহাট, শুক্রবারইয়াহাট, বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার স্কুল, মাদরাসা, ইউনিয়ন পরিষদ বভন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া মানুষকে খাবার সরবরাহ করতে দেখা গেছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে।
চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আজিজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে তার বাড়িতে অসংখ্য মানুষ আশ্রয় নেন। তিনি তাদের জন্য খাবারেও ব্যবস্থা রেখেছেন। এছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া মানুষদেরও খাবার সরবরাহে সহযোগিতা করেন।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রামের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ ক্লিপটন এর সিইও লায়ন এমডিএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিরসরাই উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কয়েক ট্রাক শুকনো খাবার নিয়ে বন্যা দুর্গত এলাকায় যান এবং সেখানে তিনি খাবার বিতরণ করেন।
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী, মিরসরাই উপজেলা জামায়াতের আমির নুরুল করিমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও উদ্ধার ও শুকনো খাবার বিতরণ করছেন বিভিন্ন এলাকায়।
মিরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত চক্রবর্তী শুক্রবার বিকেলে জানান, বৃহস্পতিবারের তুলনায় পানির তীব্রত বেড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ সেবা বিচ্ছিন্ন, এখানে মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই। এতে উদ্ধারের থেকে নিশ্চিত সংবাদ পাওয়া দূরহ হয়ে পড়েছে। সেনা বাহিনী ও রেডক্রিসেন্ট এর কর্মীরা পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে কাজ করছে। এছাড়া অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী করেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার ও তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করছে।