সেহেরী খাওয়ার গুরুত্ব

আল্লাহ্‌ তা’আলা কুরআন মাজীদে বলেছেন, “তোমরা খাও এবং পান করো যতক্ষণ না ফজরের কালো রেখা দূর হয়ে সাদা রেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর রাত পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর”। (সূরা: বাকারা-১৮৭)

“ফজরের কালো রেখা দূর হয়ে সাদা রেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠা” এর অর্থ সম্পর্কে বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে যে, “হযরত আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) বলেছেন- যখন উল্লিখিত আয়াত নাযিল হলো তখন আমি একটি কালো এবং একটি সাদা রঙের রশি নিয়ে আমার বালিশের নিচে রেখে দিলাম। রাতের বেলা আমি (রশি দুটি বার বার) দেখতে থাকলাম। কিন্তু তা স্পষ্ট দেখতে পেলাম না। সকালেই রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর কাছে গিয়ে সব বর্ণনা করলাম তিনি বললেন- এর অর্থ হলো রাতের অন্ধকার ও ভোরের আলো। “আর রাত পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর” এর অর্থ সম্পর্কেও বুখারীর বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে যে, “রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন: যে সময় এদিকে (অর্থাৎ পূর্বদিক) থেকে অন্ধকার হয়ে আসছে বলে মনে হবে এবং এদিক (অর্থাৎ পশ্চিম দিক) থেকে দিনের আলো অদৃশ্য হবে এবং সূর্য অস্ত যাবে, তখন রোযাদারের ইফতারের সময় হয়”।

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন: তোমরা সেহেরী খাও। কারণ সেহেরীতে বরকত আছে। (বুখারী, মুসলিম)

মুসলিমের বর্ণনাসূত্রে হযরত আমর ইবনুল আছব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন: “আমাদের রোযা ও আহলি কিতাব অর্থাৎ ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের রোযার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহেরী খাওয়া”। অর্থাৎ ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানরা রোযা রাখে সেহেরী না খেয়ে, আর আমরা রোযা রাখি সেহেরী খেয়ে।
বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনাসূত্রে হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমরা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর সাথে সেহেরী খেয়েছি, অতঃপর আমরা নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম”।

সেহেরী খাওয়ার শেষ সময় হলো ছুব্‌হ ছাদেক হওয়া পর্যন্ত। তাই এর শেষ সময় পর্যন্ত সেহেরী খাওয়া বিলম্বিত করা সুন্নাত যা রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ। তিনি সেহেরী খাওয়ার জন্য যেমন তাকীদ করেছেন তেমনি তা বিলম্বিত করার জন্য অর্থাৎ শেষ মুহূর্তে খাওয়ার জন্যও উৎসাহ দান করেছেন। ছুব্‌হ ছাদেক হওয়ার বহু পূর্বে প্রায় মধ্যরাতে সেহেরী খাওয়া ইসলামের পছন্দনীয় কাজ নয়। এতে আল্লাহ্‌ ও রাসূলের সন্তুষ্টি নিহিত নয়। এতে রাসূলের ইত্তেবা অর্থাৎ অনুকরণ-অনুসরণ হয় না। রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাত হলো রাতের শেষভাগেই সেহেরী খাওয়া, তিনি বলেছেন: তোমরা রাতের শেষ দিকেই সেহেরী খাও (তাবারানী)।