‘মুক্তবুদ্ধি চর্চায় নিবেদিত প্রাণ-বুদ্ধিজীবিরা দেশের শ্রেষ্ঠ মানব সম্পদ’

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেছেন- মুক্তবুদ্ধি চর্চা নিবেদিত প্রাণ বুদ্ধিজীবিরা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ মানব সম্পদ। একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ঊষালগ্নের ১৪ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর দোসর কুখ্যাত আলবদর ও আলশামস বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য দেশের সূর্য সন্তান বুদ্ধিজীবিদের নিধন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুক্তির সংগ্রামে এভাবেই অনেক বুদ্ধিজীবিকে হত্যা করা হয়েছে। ৭৫‘র পরবর্তী সময়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামানের রাজনৈতিক উত্তরসূরি জাতীয় চার নেতাকে কারগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ দুটি মর্মান্তিক ঘটনার একইযোগ সূত্র রয়েছে। আজ সকালে নগরীর জেলা শিশু একাডেমী মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলা আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের ৪৭ তম উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথাগুলো বলেন। তিনি আরো বলেন- স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ন আজাদ এবং বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি শামসুর রহমানসহ মুক্তচিন্তার ব্যক্তিত্বদের উপর হামলা চালিয়েছে। এ ঘাতকদের চিহ্নিত করে তাদের প্রতিহত করার জন্য নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করতে হবে। মুখ্য আলোচকের ভাষণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক ডীন বরণ্য বুদ্ধিজীবি প্রফেসর ড. জাকির হোসেন বলেন, ১৪ই ডিসেম্বর এমন একটি শোকাবহ দিন যে দিন বিশ্ব বিবেককে ছোবল দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসররা বুদ্ধিজীবিদের অপহরণ করে নিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসের মুক্তবুদ্ধি চর্চাকে নশ্চাৎ করার জন্য একটি মর্মাতিœক ট্রেজেডি। আমরা এখনও মনে করি এদেশে মুক্তচিন্তার মানুষেরা নিরাপদ নয়। চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল আমিন চৌধুরী বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবিরা বাঙালি জাতিসত্তার জাগ্রত বিবেক। তাদেরকে হত্যা করে ঘাতকরা যে অপরাধ করেছে তারা ইতিহাসের কলঙ্কিত খলনায়ক। এ বার্তাটি নতুন প্রজন্মকে পৌঁছে দিতে পারলেই বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার আবহ বিরাজ করবে। সভাপতির ভাষণে ২৭নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এইচ.এম. সোহেল বলেন- শহীদ বুদ্ধিজীবিরা বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানবসম্পদ। তারা পৃথিবীর মুক্তিকামী জনতার আলোকবর্তিকা। এ আলোকশিখা আমরা অন্তরে মননে ধারণ করতে পারলে বাংলাদেশ পরিশুদ্ধ হবে। স্বাগত বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবিরা বাঙালি জাতিসত্তার প্রণম্য পুরুষ্। এদেরকে স্মরণে বরণে ধারণ করে বাংলাদেশের কল্যাণ-শান্তি ও সমাজ প্রগতির মঙ্গলময় অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা সময়ের দাবি। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবি সজল দাশ’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সদরঘাট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মর্জিনা আকতার, আবৃত্তি শিল্পী এড. মিলি চৌধুরী, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর, আইন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন মিঠুন, বর্তমান সভাপতি নোমান জিহাদ, অর্থ সম্পাদক মো: জুয়েল শাওন, সাংস্কৃতিক কর্মী পলাশ কুমার দেব, তানভীরুল ইসলাম নাহিদ, মাসুদ উদ্দিন হামেদ নওয়াজ, জেলা শিশু একাডেমীর শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফারজানা আক্তার ববি, আবদুল আউয়াল টিটু প্রমুখ। আলোচনা সভার শুরুতে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে আত্ম বলিদানকারী শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা: আলীম চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শহীদ মুনির চৌধুরী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহিদুল্লাহ কায়সার, আবুল হায়েত, ডা: মো: মর্তুজা, ড. ফয়জুল মহী, শেখ আবদুস সালাম, ড. আমিন উদ্দিন, এস.এম.এ রাশিদুল হাসান, নিজামুদ্দীন আহমদ, গিয়াসউদ্দীন আহমদ, সুখরঞ্জন সমাদ্দার, এস.এ. মান্নান, হাবিবুর রহমান, মীর আবদুল কাইয়ুম, আ.ন.ম গোলাম মোস্তফা, ডা: মো: ফজলে রাব্বি, আনোয়ার পাশা, শহীধ সাবের, মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভীন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।