ঈদুল আজহায় নানার বর্ণের মুসলিমদের পদচারনায় মুখরিত ভিয়েতনামের হানয়ের আল নুর মসজিদ প্রাঙ্গন

কাজী জাহাঙ্গীর, ভিয়েতনাম থেকে::
সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে আজ ভিয়েতনামে পালিত হলো ঈদুল আজহা। ভিয়েতনামে আসলে গরু বা ছাগল জবাই করে কুরবানি দেওয়া নয়, মুলত প্রবাসি মুসলিমরা আর সাথে বিভিন্ন মুসলিম দেশের দুতাবাসে যারা অবস্থান করছেন তারা রাজধানি হানয় এর একমাত্র মসজিদ- আল নুর এ একত্রিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করার মধ্যে সিমাবদ্ধ । এটা শুধু রাজধানি হানয় কে ঘিরে যারা আছেন তাদের মধ্যে । একমাত্র মসজিদ হওয়ায় সবাই অনলাইন বা ফোন নাম্বার এর মাধ্যেমে যোগাযোগ রাখেন নামাজের সময় জানার জন্য ।
সকাল সাত টায় এবারের ঈদের জামাতের সময় নির্ধারিত হওয়ায় সময়টা হিসেব করে আমরা বেরিয়ে পড়েছিলোম ভোর পাঁচ টায়, আমরা পৌছে দেখি মসজিদের সামানের সেই ছোট রাস্তাটা অনেক মুখরিত হয়ে গেছে বিভিন্ন দেশের নানান বর্ণের মুসলিমদের পদচারনায়।

সর্বোচ্চ হাজার খানেক মানুষের সংকুলান হওয়ার মত মসজিদ টায় গাড়ি থেকে নেমেই সবার প্রথম কাজ নামাজের কাতারে জায়গা খুজে নিয়ে জামাত এর জন্য অপেক্ষা করা। মুসল্লিদের রঙ বর্ণ যেমন ভিন্ন তেমনি ভিন্নতা দেখা যায় নামাজের আদায়ের পদ্ধতিতেও। নিয়তের পর কেউ হাত বাধছেন, কেউ হাত ছেড়ে রেখে দাড়িয়ে আছেন, কেউ বুকে কেউবা নাভির উপর।

এখানে আছে সৌদি, ইরানী, নাইজেরিয়ান, আফ্রিকান, পাকিস্তানি, মালয়সিয়ান, ইন্দোনেসিয়ান, বাংলাদেশী, ভিয়েতনামিজ সহ ফর্সা, কালো, বাদামী বিভিন্ন রকমের মানুষের সমাগম । সব ভিন্নতার মধ্যেও সকলে যেভাবে চুপচাপ এক কাতারে দাড়িয়ে এক ঈমামের পেছনে নামাজ আদায় করছে, এই অনুভতিটা সত্যিই অসাধারন। মসজিদের সামনের ছোট সড়কটা আজ বেশ জমেছে, উৎসবটা এবার ছুটির দিন রবিবারে পরে যাওয়ায় অনেকে পাবিরার পরিজন নিয়ে এসেছেন একসাথে নামাজ আদায় করতে। কর্তৃপক্ষ কয়েকটা পয়েন্টে খেজুর, চকলেট এবং খাবার পানি সাজিয়ে রেখেছেন নামাজ শেষে বেরিয়ে যাবার সময় যাতে সকলে নিয়ে খেতে পারেন।

এ মসজিদে মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকায় পরিবার নিয়ে যারা এসেছেন তাদের  মহিলা সদস্যরাও সচ্ছন্দে নামাজ আদায় করেছেন জামাতে একসাথে। আর নামাজ শেষে সেই ছোট সড়কটাকে ঈদের কোলাকুলিতে মুখর করে তুলেছেন নানান বর্ণের সব মুসলিম নারী পুরুষ যা স্থানিয় লোকজনও পর্যবেক্ষণ করছেন বেশ কৌতুহল নিয়ে। কেউ তুলছেন মসজিদের ছবি, কেউ সেলফি আবার কোলাকুলি শেষে কেউ তুলে দিচ্ছেন অন্যের ছবি, তার মধ্যে সবার নজরে পড়েছে এক মধ্য প্রাচ্যিয় মহিলা, যিনি এসেছেন স্বামীর সাথে, ছবি তুলে দিচ্ছেন স্বামী আর তার আফ্রিকান বন্ধুর।

আমরা গত রাতে ছাগল জবাই করে পোলাও রান্না করে সাথে নিয়ে এসিছিলাম তাই মসজিদের অদুরের এক পার্কের পাশে গাড়ীটা পার্ক করে গাড়ীর ভিতরে প্রথমে সেরে নিলাম সকালের ভোজন পর্ব অতপর নিচে নেমে পার্কের হাওয়ায় দাড়িয়ে কোমল পানিয়ের ক্যানে চুমুক দেওয়া। যদিও দেশের বাড়ীতে প্রত্যেকেরই কুরবানি দেওয়া হচ্ছে কিন্তু প্রতিবছর কোম্পানির বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত আমরা কলিগরা রাতে রান্না করে সকালে নিয়ে এসে নামাজ আদায়ের পরে সবাই মিলে কিছুক্ষণ এক সাথে থেকে মাংস খাওয়ার উৎসবে মেতে ফিরে যাই যে যার কর্মস্থলে আবার।