বাকলিয়া চরে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা বন্ধ ঘোষণা না করলে চসিক ঘেরাও

ঘোষণা দিয়ে বাকলিয়া চরে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ ঘোষণা না করলে সিটি কর্পোরেশন ঘেরাও করবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবেশ আন্দোলন কমর্ীরা।

ছয়টি সংগঠননের সমন্বয়ে গঠিত কর্ণফুলী রক্ষায় জনগণের প্রতিবাদ মঞ্চের চলমান আন্দোলনের মধ্যে বাকলিয়া চরে ভূমি নিরিক্ষা কাজ করছে চিনের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি।  সংবাদ সম্মেলন পূর্ব সমাবেশে প্রতিবাদ মঞ্চের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার মাহফুজুর রহমান বলেন, জনগনের দাবী স্বসম্মানে মেনে বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প স্থাপন বন্ধ করুন। মেয়র সাহেব আমাদেরকে বাধ্য করবেন না। মুক্তিযোদ্ধা, যুব সমাজ সাম্পান মাঝিরা লাঠি বৈঠা নিয়ে আপনার কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। দেশকে ধ্বংস করে কার স্বার্থে কিসের এই প্রকল্প।  আজ ২৪ মার্চ রোববার বাকলিয়া দ্বীপে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দ্বীপ রক্ষায় ছয় দফা দাবী প্রদান করা হয়। সম্মেলনে কর্ণফুলী নদী গবেষক প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী বলেন, নদী ভরাট হয়ে জেগে উঠা দ্বীপ এমনিতে কর্ণফুলীকে দুইভাগ করেছে। উন্নয়নের নাম দিয়ে এই চর বা দ্বীপে বিষাক্ত বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা আত্মঘাতি। যা কর্ণফুলীকে হত্যা করবে। চসিক মেয়রকে এই কাজ করার কুপরামর্শ যারা দিয়েছে তারা দেশের শত্রু। বীর মুক্তিযোদ্ধারা আধুনিক প্রজন্মকে নিয়ে এই অন্যায় প্রতিহত করবে।  চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড কর্ণফুলীর বুকে বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প বন্ধের ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আনন্দবাজারে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী স্থাপিত একটি বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প অচল পড়ে আছে। সেটাকে সচল না করে নতুন করে নদীকে হত্যা করে বর্জ্য শোধণাগার কার স্বার্থে। এই প্রকল্প বন্ধ করে নদীতে আর একটিও বর্জ্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পড়বে না বলে ঘোষণা দিলে আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসবো।  সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়- কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু থেকে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার উজানে কর্ণফুলী নদীর মাঝখানের একটি চর। ১৯৩০ সালে তৎকালীন বৃটিশ আমলে কালুরঘাট সেতু নির্মানের কারনে ধীরে ধীরে নদীর মাঝখানে এই দ্বীপ জেগে উঠে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চরটির পশ্চিম দক্ষিণ পাশে কিছুটা খনন করেছে। চরটির মোট আয়তন প্রায় ১০৫ একর বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে বর্তমানে চরটি সরকারি এক নম্বর খাস খতিয়ানে নদী শ্রেনীর জমি হিসাবে চিহ্নিত। এই চরটিতে বর্জ্য শোধণাগার করার জন্য ২০২৩ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর অনুকূলে খাসজমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের একটি আবেদন ভূমি মন্ত্রণালয়ে করা হয়। বর্তমানে চরটিতে বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প স্থাপনের জন্য মাটি পরীক্ষার কাজ চলমান। এই দ্বীপ এবং কর্ণফুলী রক্ষায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত সুপারিশ হচ্ছে-  ক) ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে মহামান্য হাইকোর্টের “আদালতের রায়ে আমাদের দেশের নদীগুলোকেও জীবন্ত সত্তা, জুরিসটিক পারসন বা লিগ্যাল পারসন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং মূলত এর মাধ্যমে মানুষের মত নদীর মৌ‌লিক অধিকার স্বীকৃত হ‌য়েছে। হাইকোর্টের এই আদেশ অনুযায়ী নদীর মাঝখানে বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প করা অবৈধ এবং আদালতের আদেশের লঙ্ঘন করে। সুতারাং এই প্রকল্প হতে পারে না।  খ) বাংলাদেশের সংবিধান (অনুচ্ছেদ ১৮ক) বলছে, ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’ তার মানে জলাভূমি অর্থাৎ নদীর নিরাপত্তা বিধান সংবিধানস্বীকৃত এবং সেটি সেটি করতে হবে স্বয়ং রাষ্ট্রকে। রাষ্ট্র মানে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। যে কারণে ২০১৯ সালে হাইকোর্ট যখন একটি রায়ে নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেন, তখন নদী রক্ষা কমিশনকে নদীর অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা করা হয়-যারা রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে নদীমাতার অধিকার রক্ষা করবে। কিন্তু এই প্রকল্প নদীর অধিকারকে হত্যা করবে। দেশের সংবিধান অনুযায়ী নদীর মাঝখানে বর্জ্য শোধণাগার প্রকল্প করা থেকে সরে আসতে হবে।  গ) ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরে বন্দরনগরী ভিত্তিক পরিবেশ সংস্থা ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপিনিয়ন(ইসিএইচও) এর সহযোগিতায় কর্ণফুলী নদীর প্রাণ প্রকৃতি, উদ্ভিদ বৈচিত্র্য ও দূষণ নিয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী ৮১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে বলে একটি গবেষণায় উঠে এসেছে। দূষণ রোধে কোনো ব্যবস্থা না নিলে আরও ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে পড়বে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। ৫৩টি শিল্পসহ ৮৯টি উৎস থেকে কর্ণফুলী নদী দূষিত হচ্ছে। গবেষণায় কর্ণফুলী নদীর তীরে ৫২৮ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া গেছে। উপরোক্ত গবেষণা তথ্য মতে কর্ণফুলীর তীর থেকে বিলুপ্তির ঝঁুকিতে থাকা ৮১ প্রজাতির দেশীয় উদ্ভিদ সংগ্রহ করে নাসারিতে বিকাশিত করে সামানের বর্ষা মৌসুমে এই চরে লাগানো হোক। এতে কর্ণফুলী নদী প্রাণ ফিরে পাবে।  ঘ) চট্টগ্রাম মহানগরীতে মানুষের বিনোদনের কোন স্থান নাই। পৃথিবীতে অনেক দেশে নদী বা সাগরের মাঝখানের চরে নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করে দেশি বিদেশি পর্যটক দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছে। এই চরটি পরিবেশ বান্ধন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি ইকো ট্যুরিস্ট স্পট গড়ে তোলা হোক। এতে করে কর্ণফুলীর নাব্যতা রক্ষার পাশাপাশি চট্টগ্রামের ও দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।  ঙ) আজকে থেকে আগামি একসপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এই প্রকল্প বাকলিয়া চরে হবে না মর্মে ঘোষণা দিতে হবে। অন্যতায় আমরা সিটি কর্পোরেশন ঘেরাও সহ উচ্চ আদালতে নির্দেশ অমান্য করাসহ সংশ্লিষ্ট আইনে প্রতিকার প্রার্থনা করে রিট মামলা দায়ের করা হবে।  ভাসমান মঞ্চে স্থাপিত মঞ্চে সংবাদ সম্মেলন শেষে মুক্তিযোদ্ধা নদী গবেষক পরিবেশ কমর্ী ও সাংবাদিকরা দ্বীপটি ঘুরে দেখেন। পরবতর্ীতে চরে আবৃত্তিশিল্পী ও পরিবেশ কমর্ী দিলরুবা খানমের সঞ্চালনায় আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন,. রাজনীতি