জব্বারের বলি খেলার ১১৫তম আসরের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার বাঘা শরীফ বলী

< মির্জা ইমতিয়াজ শাওন:: শতবর্ষী জব্বারের বলী খেলায় ১১৫তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার বাঘা শরীফ বলী। ১১৪তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন কুমিল্লার শাহজালাল বলী। কিন্তু এবার তিনি খেলায় অংশ নেননি।

লালদীঘি ময়দানে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে অনুষ্ঠিত ফাইনালে একই কুমিল্লার অপর বলী রাশেদকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। ফাইনালে প্রায় ১১ মিনিট লড়াইয়ের পর বাঘা শরীফের কাছে হেরে যান রাশেদ। জব্বারের বলীখেলায় রানার্সআপ হন রাশেদ বলী ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন খাগড়াছড়ির বলী সৃজন চাকমা বলী।

খেলা শুরুর আগেই পুরো লালদীঘি ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে খেলা শুরু হয়। প্রথম রাউন্ডে প্রায় ৮০ জন বলী অংশ নেন। এরপর শুরু হয় চ্যালেঞ্জিং রাউন্ড। খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফের হাতে ট্রফি ও প্রাইজ মানি তুলে দেন অতিথিরা।

বেলুন উড়িয়ে বলীখেলার উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাউজানের সংসদ-সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন এবারের বলী খেলার স্পন্সর প্রতিষ্ঠান মঈন এগ্রো ফার্ম ও এনএইচটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর ও সিএমপির উপকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান। আয়োজক কমিটির সভাপতি ও ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। খেলা পরিচালনা করেন আয়োজক কমিটির সহসভাপতি সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুবকদের সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর বলী খেলার সূচনা করেন। এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি ১২ বৈশাখ লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হতো জব্বারের বলী খেলা। এই খেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘির আশপাশের প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা। মেলায় কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

বলী খেলা উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলার পরিসর শুরু হয়েছে নগরীর আন্দরকিল্লা মোড় থেকে। এরপর সেটা বক্সিরহাট বিট, লালদীঘির চারপাশ, কেসেদে রোড, জেলা পরিষদ চত্বর হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা ছড়িয়ে গেছে। প্রখর রোদ আর গরম উপেক্ষা করে যাচ্ছেন ক্রেতারাও কেনাকাটায় মেতেছেন। মানুষের প্রচুর ভিড়। নানা ধরনের পণ্যের পসরা নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে এসেছেন মেলায়। বাঁশ ও বেতের আসবাবপত্র, ঝাড়ু, ঝাটা, মাদুর, পাটি, পাখা, পাপোশ, কুলা, ঢালা, মোড়া, হরেক রকমের ঘর সাজানো কারুপণ্য, নানা ধরনের টব, শিশুদের খেলনা, হাড়ি-পাতিল, দা-বটি-খুন্তি, সাজের গয়না, বিভিন্ন গাছের চারাসহ নানারকম জিনিসপত্র নিয়ে বসেছেন। প্রচণ্ড গরমে হাত পাখার বিক্রিও চলছে বেশ। মেলায় গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন লোকজ শিল্পের পাশাপাশি গৃহস্থালি পণ্য থেকে শিশুদের খেলনা, দা, ছুরি ও বঁটিসহ নানা ধরনের পণ্য মিলছে।