তীব্র তাপপ্রবাহ: শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী নন অভিভাবকরা

বৈশাখ শুরু না হতেই এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ। পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরের সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ মিলিয়ে ২৬ দিন বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজ, মাদরাসা। ছুটি শেষে রোববার (২১ এপ্রিল) খুলছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এমন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে, যখন সারাদেশে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ।

১৩ জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অতি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তীব্র এ গরমে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী নন অভিভাবকরা।
তারা বলছেন, তীব্র তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের জন্য যাতায়াত ও ক্লাস করা খুবই কষ্টকর। বিশেষ করে স্কুল পর্যায়ের শিশু শিক্ষার্থীরা বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। বাসায় থেকেই শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সেখানে গরমে স্কুলে যাওয়া-আসা ও দীর্ঘ সময় ক্লাস সম্ভব নয়। গরম না কমা পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার পক্ষে তারা।

অন্যদিকে, শিক্ষকরা তাকিয়ে আছেন সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে। তাদের অভিমত, প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে চায় না। অনুপস্থিতি বেশি থাকে। এতে কিছু শিক্ষার্থী এলে, আর কিছু অনুপস্থিত থাকলে নতুন শিক্ষাক্রমের যে উদ্দেশ্য তা ব্যাহত হবে। আবার বেশিরভাগ স্কুলের শ্রেণিকক্ষে গরমে স্বস্তিতে বসে ক্লাস করারও ব্যবস্থা নেই। শহর ও গ্রাম সব জায়গায় চলছে লোডশেডিং। ফলে স্কুলে এসে কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে অভিভাবকরা ভয়-আতঙ্কে সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো বন্ধ করে দেবেন। সার্বিক বিষয় চিন্তা করে শিক্ষা প্রশাসন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন শিক্ষকরা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধের দাবি

পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটির সমন্বয়ে টানা ২৬ দিন ছুটি কাটিয়ে রোববার (২১ এপ্রিল) খুলছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমন এক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে, যখন দেশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৭ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলুর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মানুষজনকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করছে প্রশাসন। এরমধ্যে স্কুল-কলেজ খুললে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা আগামী ৭ দিনের জন্য বন্ধ রাখার দাবি জানাচ্ছেন অভিভাবকরা।

বছরের শুরুতে প্রকাশিত ছুটির তালিকা অনুযায়ী— ১০ মার্চ থেকে প্রাথমিক ও মাদরাসায় এবং ১১ মার্চ থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি শুরুর কথা ছিল। শিখন ঘাটতি পূরণে মাধ্যমিকে ১৫ দিন ছুটি কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে রমজানের শুরুতে প্রায় দুই সপ্তাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চালু ছিল। আর রমজানের প্রথম ১০ দিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট হলে দফায় দফায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আসে। সর্বশেষ আপিল বিভাগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—ছুটি সমন্বয় করে রোজায় ১৫ দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার পক্ষে রায় দেন। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী— প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০ দিনের ছুটি কমানো হয়।

একইভাবে সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও মাদরাসায়ও ছুটি কমিয়ে রমজানের শুরুর দিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ক্লাস চালু রাখে সরকার। তবে ছুটি শেষে রোববার থেকে পুরোদমে চালু হচ্ছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।