‘বুদ্ধিজীবী হত্যা বিশ্ব ইতিহাসে একটি ঘৃণ্যতম অধ্যায়’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। সকাল ৮ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে পুস্পমাল্য অর্পণ করে দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সমাজ বিজ্ঞানী বরেণ্য বুদ্ধিজীবী প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ও মাননীয় উপ-উপাচার্য বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। পরে মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য চ.বি. বঙ্গবন্ধু চত্বরে মহাকালের মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে পুস্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চ.বি. শিক্ষক সমিতি, অনুষদসমূহের ডিনবৃন্দ, হলসমূহের প্রভোস্টবৃন্দ, সভাপতি-পরিচালক ফোরাম, অফিসার সমিতি, চ.বি. ক্লাব (ক্যাম্পাস), সমন্বয় কর্মকর্তা বিএনসিসি, চ.বি. ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, কর্মচারি সমিতি, কর্মচারি ইউনিয়ন, সাংবাদিক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালো ব্যাজ ধারণ করা হয় এবং সকাল ৯ টায় বঙ্গবন্ধু চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ভাষণ দেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন চবি মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।
মাননীয় উপাচার্য তাঁর ভাষণে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদ সদস্যবর্গ, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ত্রিশলক্ষ বীর বাঙালি, শহীদ জাতীয় চারনেতা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিনম্র চিত্তে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন। মাননীয় উপাচার্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকে একটি নির্মম, নৃশংস, অমানবিক, ঘৃণ্যতম, ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ড অভিহিত করে বলেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনে দেশীয় দোষরদের সাথে নিয়ে স্বাধীনতার পরেও যেন বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ সোনার বাংলায় পরিণত হতে না পারে সেই নীল নকশা বাস্তবায়নে হায়েনারা দেশকে মেধাশুন্য করতে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলীয়ান তাঁর সুযোগ্য তনয়া, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, মানবতার জননী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে অর্থনৈতিক মুক্তি এবং উন্নয়ন অগ্রগতিতে বাংলাদেশ আজ সেই পাকিস্তানিদের পেছনে ফেলে বিশ^ দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত বিশে^র ২৬টি দেশের একটিতে পরিনত হবে। মাননীয় উপাচার্য জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এই আত্মত্যাগ সকলকে হৃদয়ে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি প্রক্টর ও অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী। এ ছাড়াও আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী, চবি শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ-চবি’র সভাপতি প্রফেসর ড. মো. রাশেদ-উন-নবী, সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. সুলতান আহমেদ, সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহামদ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) জনাব কে এম নুর আহামদ, এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. গণেশ চন্দ্র রায়, আইন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর এ বি এম আবু নোমান, অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনাব মো. শাহ আলম, চ.বি. ক্লাব (ক্যাম্পাস)-এর সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, কর্মচারী সমিতির সভাপতি জনাব মো আনোয়ার হোসেন ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জনাব মো আবদুল হাই। এছাড়াও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে স্ব রচিত কবিতা পাঠ করেন সংগীত বিভাগের সভাপতি প্রফেসর সুকান্ত ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তথ্য) জনাব দিবাকর বড়ুয়া। এছাড়া অনুষ্ঠান শুরুতে পবিত্র কোরআন, পবিত্র গীতা, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন চবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন। অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মসজিদে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার সদগতি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়।