বিপদ সীমার উপরে মাতামুহুরী নদীর পানি

কক্সবাজার প্রতিনিধি।

টানা তিনদিন ধরে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বেশিরভাগ নিন্মাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনো ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় মাতামুহুরী নদীতে ঢলের পানি সোমবার (৮ জুলাই) বিকালে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি নীচু এলাকা প্লাবিত হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করায় উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গিয়ে বেশিরভাগ ইউনিয়নের আমন বীজতলাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এদিকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধ্বসসহ যে কোন মানবিক বিপর্যয় ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা থাকায় পাহাড়ের চূড়ায়, পাহাড়ের পাদদেশ ও পাহাড়ের আশেপাশে বসবাসকারীদের অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। যে কোন দূর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুদ্দীন মোহাম্মদ শিবলী নোমান। উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণের ফলে মাতামুহুরী নদীতে উজান নামা পাহাড়ি ঢলে তাঁর ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে কয়েক হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, প্রবল বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তাঁর ইউনিয়নে নদীর তীরবর্তী বেশির ভাগ এলাকায় তলিয়ে বেশকিছু লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহামদ সিকদার বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গোবিন্দপুর, ডেইংগাকাটাসহ ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টি ওয়ার্ড পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ওই ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছার বলেন, টানা বর্ষনের ফলে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তার ইউনিয়নে পূর্বপাড়া, জহিরপাড়া, হাজীপাড়া, মন্ডলপাড়া ও চরপাড়া এলাকার অন্তত চার হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। হারবাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নে নীচু এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এতে আমন বীজতলাসহ ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন করে আরো বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। উপজেলার উপকুলীয় বদরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল বশর ও কোনাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, টানা বর্ষনের ফলে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল তাদের ইউনিয়নের বিভিন্ন শাখা খাল ও স্লুইচ গেইট দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে ইউনিয়ন দু’টির অধিকাংশ নিন্মঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বর্তমানেও ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় উপকুলের মৎস্য প্রকল্পসমুহ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে তাঁর ইউনিয়নের বেশিরভাগ নীচু এলাকা হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কয়েক হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে উপজেলার চিংড়িজোনের হাজার হাজার মৎস্য প্রকল্প পানিতে তলিয়ে গিয়ে ঘের মালিক ও চাষীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া কৈয়ারবিল, খুটাখালী, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী ও সাহারবিলসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আমন বীজতলাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে। চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, টানা বর্ষনের ফলে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে পৌরসভার একাধিক স্থানে বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তত ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মোহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ভারী বর্ষনের ফলে আসন্ন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এ কন্ট্রোল রুম থেকে বন্যাপরিস্থিতি সার্বিক মনিটরিং করা হচ্ছে। ইউএনও আরও বলেন, বন্যাপরিস্থিতি মোকাবেলায় খাদ্য গুদামে ১৫ মে:টন চালসহ শুকনো খাবার মওজুদ করে রাখা হয়েছে। এছাড়া হারবাং, বরইতলীসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভিজিট করে স্লুইচ গেইটসমুহ পর্যক্ষেণ করা হয়। পাশাপাশি বন্যা কবলিত ইউনিয়ন সমুহে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের তালিকা প্রস্তুত করে দ্রুত উপজেলা পরিষদে প্রেরণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।