একুশের চেতনাকে আমাদের অন্তরে গভীরভাবে ধারণ করতে হবে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পালিত হয়েছে। এদিন সকাল ১০:০০ টায় চবি মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা-শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর অনুষদের ডিনবৃন্দ, চবি শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, হলসমূহের প্রভোস্টবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগীয় সভাপতি ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দ, অফিসার সমিতি, চবি ক্লাব (ক্যাম্পাস), চবি মহিলা সংসদ, সমন্বয় কর্মকর্তা বিএনসিসি, চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, কর্মচারী সমিতি, কর্মচারী ইউনিয়ন, সাংবাদিক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসমূহ পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে ভাষা শহীদদের স্মরণে মাননীয় উপাচার্যের নেতৃত্বে চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শোক র‌্যালি শুরু হয়ে চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে শেষ হয়। অতঃপর মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বেলা ১১:০০ টায় চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে চবি মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মোঃ আবদুল করিম এবং আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহম্মদ এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চবি প্রক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার।

মাননীয় উপাচার্য তাঁর বক্তৃতায় মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গকারী ভাষা-শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, একইসাথে বিনম্র চিত্তে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি প্রদানকারী ত্রিশলক্ষ বীর শহীদদের এবং নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যাদের। তিনি বলেন, “আমাদের ভাষা আন্দোলনকে স্বাধীনতার সূতিকাগার বলা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি আজ জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হচ্ছে। যদিও ভাষা আন্দোলন শুরু করেছিল ছাত্ররা পরে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এগিয়ে এসে আন্দোলনকে সর্বাত্মক ভাবে ছড়িয়ে দেয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠিত হয় মায়ের ভাষা বাংলা। মাতৃভাষার এ আন্দোলন পরবর্তীতে শিল্প-সাহিত্যে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে।” মাননীয় উপাচার্য আরও বলেন, “একুশ বাঙালি জাতির জাগরণের নাম। একুশের চেতনাকে আমাদের অন্তরে গভীরভাবে ধারণ করতে হবে।” তিনি আমাদের গর্ব ও অহংকারের প্রতীক বাংলা ভাষা সর্বস্তরে চর্চার মাধ্যমে দেশপ্রেমিক স্মার্ট নাগরিক হয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানান। সর্বোপরি এ বিশ^বিদ্যালয়কে আর্ন্তজাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে মাতৃভাষা বাংলাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষক-গবেষকবৃন্দ গবেষণা, প্রকাশনা ও শিক্ষার মানোন্নয়নে অধিকতর মনোযোগী হবেন মর্মে মাননীয় উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলোচনা সভায় চবি মাননীয় উপাচার্য একুশে পদক-২০২৪ এ পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পকলা বিভাগে সংগীত ক্যাটাগরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ (মরণোত্তর), ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে মিনার মনসুর এবং শিক্ষা বিভাগে প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষুসহ সকল একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান ।

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর, আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক, চবি আলাওল হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফরিদুল আলম, চবি আইন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. রকিবা নবী, চবি অফিসার সমিতির সভাপতি রশিদুল হায়দার জাবেদ, চবি কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোঃ সুমন মামুন ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী হোছাইন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন চবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন চবি রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন চবি পালি বিভাগের প্রফেসর ড. জ্ঞান রত্ন শ্রমণ ও পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন চবি আধুুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক জেসী ডেইজী মারাক। অনুষ্ঠানে ভাষা শহীদদের সম্মানে দাঁড়িয়ে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালায় চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দ, অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, চবি সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়াও কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মসজিদে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব উপাসনালয়ে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। বেলা ১১:৩০ টায় চবি কেন্দ্রীয় মন্দিরে ভাষাশহীদ, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আত্মার চিরশান্তি এবং দেশের অব্যাহত অগ্রগতি ও মঙ্গল কামনায় গীতাপাঠ অনুষ্ঠিত হয়। চবি প্রশাসনিক ভবন ও হলসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়।