গৃহবধূকে নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগ

হাটহাজারীতে জান্নাতুন নাঈম (২০) নামে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৬ জুলাই) হাটহাজারী পৌরএলাকার মেহেদি পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবারের দাবি তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে শ্বশুর ও শাশুড়ি। এদিকে ঘটনার পর অভিযুক্ত শ্বশুর মো.ফারুক আহমদ ও শাশুড়ি স্বপ্না বেগমকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা যায়, সকাল সাড়ে এগারটার দিকে নিহতের বাড়ির লোকজনকে নিহতের শ্বশুর বাড়ির লোকজন জানায় সে স্ট্রোক করেছে। প্রথমে স্থানীয় একজন চিকিৎসক ডা. জুলান দাশের শরনাপন্ন হলে তিনি দ্রুত একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিতে বলেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে নিহতের বাড়ির লোকজন হাসপাতালে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে তাদের মেয়েকে হত্যা করেছে অভিযোগে শ্বশুর-শাশুড়িকে গালমন্দ করতে থাকে। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের হাতাহাতিতে শ্বশুর ফারুক আহমেদ মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। খবর পেয়ে হাটহাজারী পুলিশের সার্কেল আব্দুল্লাহ আল মাসুম, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিহতের লাশ এবং আঘাতপ্রাপ্ত শ্বশুর ফারুক আহমদকে উদ্ধার করে উভয়কে পুলিশ পাহারায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।

নিহত জান্নাতুন নাঈমের নানা শফিউল্লাহ (৪৯)অভিযোগ করে প্রতিবেদককে বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে হাটহাজারী পৌর এলাকার মেহেদি পাড়ার রাজ মেহেদি বাড়ির ফারুক আহমেদের ছেলে মো. ফোরকান মেহেদির (৩০) সাথে তার নাতনীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই নাঈমের শ্বশুর-শাশুড়ি বিভিন্ন সময়ে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ বিচারও হয়েছে। নির্যাতনের কারণে একবার মেয়েকে তার বাবার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে লিখিত কাগজ দিয়ে তাকে ফিরিয়ে নিয়েছিল শ্বশুর বাড়ির লোকজন। গত রমজান মাসেও শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে শারীরিক নির্যাতন করেছিল। তাই আমরা মনে করি নাঈমকে আজকেও তারা মারধর করে হত্যা করেছে।

নিহতের মামী পারভিন আক্তার ও মামা আবু হানিফ বলেন, আমাদের আদরের ভাগনীকে তারা মেরে ফেলেছে। তার ফয়জুল্লাহ নামে পাঁচ মাস বয়সি একটি পুত্র সন্তানও আছে।

তিনি বলেন, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর শাশুড়ি তার গায়ে হাত তোলে। কি কারণে হাত তোলা স্পষ্ট করে বলেনি কেউ। বাবার বাড়ির সাথে মোবাইলে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল তারা। ভাগিনী কেমন আছে সরাসরি তার শ্বশুর বাড়ি যাওয়া ছাড়া জানার কোনো সুযোগ ছিল না।

নিহতের শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি অভিযোগ থাকলেও স্বামী প্রবাসী মো ফোরকানের প্রতি কোন অভিযোগ নেই মেয়ে পক্ষের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুম গণ্যমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। ইতোমধ্যে আমরা লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দিয়েছি। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের পর জানা যাবে হত্যা নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু। এখনো পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাইনি। শ্বশুর-শাশুড়িকে জিজ্ঞাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।