দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনঃ কাপ্তাইয়ে নতুন কেন্দ্রসহ ২২ ভোটকেন্দ্রে প্রস্তুতি সম্পন্ন

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনঃ কাপ্তাইয়ের ২২ ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবে ৪১৭ কর্মকর্তা

মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই (রাঙামাটি)।
আগামীকাল শুক্রবার শেষ হচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা। বাকি মাত্র একদিন। রবিবার নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে ভোটকেন্দ্রে ছুটবেন ভোটাররা। তাদের নিরাপত্তায় পুলিশ-প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, গোয়েন্দা টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করতে রাঙামাটি জেলাধীন কাপ্তাইয়ের ২২টি ভোটকেন্দ্রে কাজ করবেন প্রায় ৪১৭ জন কর্মকর্তা। ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে সকল প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে এসব কর্মকর্তাদের।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাচন অফিসার তানিয়া আক্তার বলেন, আগের সব নির্বাচনে কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ১৮টি। তবে এবার বেড়েছে নতুন করে আরও ৪টি ভোটকেন্দ্র। প্রস্তুত করা হয়েছে সব আয়োজন। সবকিছু ঠিক থাকলে এসব কেন্দ্রে ভোট হবে উৎসব মূখর।
নির্বাচন কর্মকর্তা আরও বলেন, দুর্গম পাহাড়ে ভোট কেন্দ্রে পৌঁছাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের এতদিন হাটতে হত মাইলের পর মাইল। এরপর ভোট দিয়ে আবার গন্তব্যে পৌঁছাতেও একই দুর্ভোগ পোহাতে হতো তাদের। সবকিছু বিবেচনায় নতুন করে বাড়ানো হয়েছে আরও ৪টি ভোটকেন্দ্র। এখন আশা করা হচ্ছে ভোট হবে উৎসব মূখর ও স্বতঃষ্ফুর্ত।
চূড়ান্ত তালিকায় বাড়ানো ৪টি কেন্দ্র হল: রাইখালী ইউনিয়নের রিফিউজি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ডংনালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওয়াগ্গা ইউনিয়নের মুরালী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শীলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন হবে পাহাড়েঃ
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দীপংকর তালুকদারের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আশা করা হচ্ছে এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটবে না। তবে গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে পাহাড়ের বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দল। তারা বারবার বলছে পাহাড়ে নির্বাচন মানতে চায় না। এমন পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক সংগঠন গুলো নতুন করে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও সহিংসতার চেষ্টা করতে পারে বলে ধারণা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
এদিকে, পরিস্থিতি যেমনই হোক, ভোটারদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গত কয়েকদিন ধরে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশের টহল চোখে পড়েছে।

কাপ্তাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম ও চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনচারুল হক বলেন, প্রতিটি এলাকাকেই অতিরিক্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হতে থানা পুলিশের সদস্যরা মাঠে কাজ করছে৷ ইতিমধ্যে উপজেলার কোন জায়গায় কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। সবকিছু এখন পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করতে উপজেলার মোট ২২টি ভোটকেন্দ্রে কাজ করবেন প্রায় ৪১৭জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। ইতিমধ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে এসব কর্মকর্তাদের।
নির্বাচন কমিশনের সূত্র বলছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কাপ্তাইয়ের ২২টি ভোট কেন্দ্রে কাজ করবেন ২৪ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। তাদের সহযোগিতা করবেন ১৩১জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। ভোটারদের সহযোগিতায় থাকবেন ২৬২জন পোলিং অফিসার।

নতুন করে বেড়েছে ২ হাজার ৮৪৯ ভোটারঃ

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্র বলছে, চুড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী কাপ্তাইয়ে মোট ভোটার রয়েছে ৪৮ হাজার ৮৭৫ জন। যা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে ২ হাজার ৮৪৯ জন বেশি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাপ্তাইয়ে মোট ভোটার ছিল ৪৬ হাজার ২৬ জন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। তার মধ্যে কাপ্তাইয়ে মোট ৪৮ হাজার ৮৭৫ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৫ হাজার ৬৯৪ জন এবং মহিলা ভোটার ২৩ হাজার ১৮১ জন।

কোন ইউনিয়নে কত ভোটকেন্দ্রঃ
গত ১৮ সেপ্টেম্বর একটি তালিকা প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাচন অফিস। সেখানের তথ্য ঘেটে দেখা যায়, চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নে রয়েছে ৪টি ভোটকেন্দ্র, রাইখালীতে ৫টি, চিৎমরমে ৩টি, কাপ্তাইয়ে ৫টি ও ওয়াগ্গায় ৫টি ভোট কেন্দ্র।
চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের কেন্দ্রগুলো হলঃ চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ, কেপিএম উচ্চ বিদ্যালয়, কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয় এবং তৈয়বিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা।
রাইখালী ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্র হলঃ নারানগিরি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রিফিউজি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাইখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (বড়খোলা পাড়া), ডংনালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ভালুকিয়া নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
চিৎমরম ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্র হলঃ চিৎমরম উচ্চ বিদ্যালয়, চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদ এবং চাকুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কাপ্তাই ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্র হলঃ কাপ্তাই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চৌধুরীছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়, বিএফআইডিসি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং হরিনছড়া মুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্র হলঃ শীলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়ইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়াগ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, মুরালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সাক্রাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়।