যাত্রী কমেছে ৭০ শতাংশ, ৩০০ লঞ্চ বন্ধ

যাত্রীর অভাবে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০০ লঞ্চ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন লঞ্চ মালিকরা। বাকি যেগুলো চলছে তার আয় দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান তারা। পদ্মা সেতু চালুর পর স্বাভাবিকভাবেই লঞ্চের যাত্রী বেশ কমে যায়। তবে সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, বিএনপির হরতাল-অবরোধের কারণে যাত্রী কমার হার ৭০ শতাংশে পৌঁছেছে।

পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন লঞ্চে করে ঢাকা থেকে বরিশালসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করতেন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেতু উদ্বোধনের পর সদরঘাটে যাত্রীদের চাপ আকস্মিকভাবে কমে যায়। আর এখন হরতাল-অবরোধের কারণে ধস নেমেছে যাত্রী পরিবহনে।

লঞ্চ মালিকরা বলছেন, যাত্রীর অভাবে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৭শ’ লঞ্চের মধ্যে প্রায় ৩শ’ লঞ্চ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন শ্রমিকরাও।

এবিষয়ে এক শ্রমিক বলেন,
পাঁচ দিন পর পর লঞ্চ চলছে। স্টাফদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তারা মালিকদের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেও পারছেন না। মানুষ সদরঘাটে আসছেন না। তারা বিভিন্নভাবে কম সময়ে ঢাকায় পৌঁছে যেতে পারছেন।

আরেকজন শ্রমিক বলেন, মূল প্রভাব পড়েছে মূলত তেলের ওপর। আগে আমাদের তেলের যে দাম ছিল, এখন তার দাম দ্বিগুণেরও বেশি।

এর প্রভাব পড়েছে সদরঘাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। ঘাটের মূল ফটকে প্লাস্টিক পণ্য, জুতা, কনফেকশনারি, পোশাক, ফলের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁসহ রয়েছে অন্তত ৩ শতাধিক দোকান। এসব দোকানে এখন কাঙ্ক্ষিত বিক্রি না থাকায় ব্যবসায়ীদের দিন কাটছে হতাশায়।

এমনই একজন ব্যবসায়ী বলেন,
বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো নয়। আগে যা ব্যবসা করেছিলাম, এখন আর আগের মতো অবস্থা নেই। এখন আমি ‍ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। এখন দুনিয়াতে বেঁচে থাকাই মুশকিল। সারা মাসের বাজার কেনার পর যখন বাসা ভাড়া দিতে যাব, তার জন্য এখন মানুষের কাছে হাত পাততে হয়।

লঞ্চ মালিকরা বলছেন, শুধু পদ্মা সেতু নয়, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও হরতাল অবরোধও তাদের ব্যবসাকে বড়সর ধাক্কা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ৮০ শতাংশ গরিব মানুষ লঞ্চে যাতায়াত করেন। তাদের মুখের দিয়ে তাকিয়ে ও তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ইজারাপত্র বাতিল করা অত্যন্ত জরুরি। এটি বাতিল করলে আমাদের কিছু যাত্রী বাড়বে।

মালিকদের দেয়া তথ্য মতে, ঢাকা-বরিশাল রুটে আগে যেখানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি লঞ্চ চলাচল করতো, সেখানে এখন চলছে মাত্র দুটি। আগে ঢাকা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৮০টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত। এই সংখ্যা ২০টি কমে এখন ঠেকেছে ৬০টিতে। সেই হিসাবে এক বছরে লঞ্চ চলাচল কমেছে ২৫ শতাংশ।

লঞ্চ মালিকরা বলছেন, তাদের ক্ষতি পোষাতে এই মুহূর্তে দরকার সরকারের সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্যোগ। দেশের পর্যটন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ কিংবা পর্যটন খাতে লঞ্চগুলোকে কাজে লাগানো যায় কি না, সে বিষয়েও সরকারকে ভাবতে বলছেন তারা।