স্কুলের বাইরে ছুরির কোপ, রণক্ষেত্র আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন

একটি স্কুলের বাইরে ছুরিকাঘাতে তিন শিশু আহত হওয়ার পর রণক্ষেত্র হয়ে উঠলো আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহর। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ শুরু করে উন্মত্ত জনতা। বিক্ষোভ চলাকালীন বাস ও ট্রামে আগুন দেওয়া হয় এবং একটি দোকান লুট করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ আর যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য পুলিশ ও রাজনীতিবিদরা জনতাকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে অনুমান, শরণার্থী হিসাবে আসা এক ব্যক্তিই শিশুদের উপর হামলা চালিয়েছে। তার পরেই ‘আইরিশ লাইভস ম্যাটার’ স্লোগান তুলে বিক্ষোভ শুরু হয় ডাবলিনে। আইরিশ সংসদ ভবন, লেইনস্টার হাউসের চারপাশে একটি পুলিশ কর্ডন স্থাপন করা হয়েছে। ৪০০ জনেরও বেশি আইরিশ পুলিশ কর্মকর্তা শহরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বিবৃতিতে, সিএইচ সুপার প্যাট্রিক ম্যাকমেনামিন বলেছেন, পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্যকে আক্রমণ করা হয়েছে এবং লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তবে, তিনি বলেছিলেন কোনও গুরুতর আঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। ডাবলিন শহরের কেন্দ্র এখন শান্ত এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে বলে দাবি তার। ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টা নাগাদ।

স্কুলের বাইরে তিনটি শিশুর উপর ছুরি নিয়ে হামলা চালায় এক ব্যক্তি। গুরুতর জখম হয় তারা। আহত হন এক ব্যক্তি ও এক নারীও। ৫ বছর বয়সী একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ৬ বছরের দুই শিশু আপাতত স্থিতিশীল বলেই জানা গিয়েছে। সকলেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সুপারিন্টেন্ডেন্ট লিয়াম গেরাঘটি হামলার সময়ের মোবাইল ফোনের ফুটেজ এবং এর পরের ঘটনা সম্পর্কে কারোর কাছে তথ্য থাকলে, তাদের এগিয়ে আসার জন্য আবেদন করেছেন। তিনি ঘটনাটিকে বেদনাজনক বলে দাবি করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, ৫০ বছর বয়সী হামলাকারী আসলে শরণার্থী হিসাবে আয়ারল্যান্ডে এসেছিল। তার পরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে দেশের রাজধানী। একাধিক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরও ছোড়েন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে পুলিশ ডাবলিনের প্রধান রাস্তা ও’কনেল স্ট্রিটে ভিড় সাফ করতে ঢাল এবং লাঠিচার্জ করে।

অন্য প্রান্তে, ও’কনেল ব্রিজের কাছে, একটি বাস এবং একটি গাড়ির অবশিষ্টাংশ থেকে আগুনের শিখা দেখা যায়। উন্মত্ত জনতা দোকানের জানালা ভেঙে দেয় এবং আতশবাজি ফেলে, রাতের বাতাসকে তীব্র করে তোলে। বিকট শব্দ শহর জুড়ে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। কেন তারা সেখানে আছেন জানতে চাইলে ভিড়ের সদস্যরা সাংবাদিকদের হুমকি দেয় এবং দাবি করে যে মিডিয়া অভিবাসন সম্পর্কে সত্য বলছে না। ডাবলিনের মতো শান্ত শহরে এমন বিক্ষোভ বরদাস্ত করা হবে না বলে বার্তা দিয়েছেন আইরিশ বিচারমন্ত্রী হেলেন ম্যাকএনটি। আইরিশ প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিন্স হামলায় আহত শিশুদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি ভয়াবহ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি শিশু এবং তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার গুজবে কান না দিয়ে ডাবলিনবাসীকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।