তফসিল : একযোগে মাঠে নামবে সরকারবিরোধী ডান-বাম ও ইসলামী দলগুলো

একতরফা নির্বাচনের তফসিল ও সরকার পতনের দাবিতে অলআউট আন্দোলনে নামছে বিরোধীরা। তফসিল ঘোষণা হলে একযোগে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে সরকারবিরোধী ডান-বাম ও ইসলামী দলগুলো। তফসিল প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে বিক্ষোভ মিছিল করবে তারা। এ ছাড়া তফসিলের পরদিন থেকে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল, নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল কিংবা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি আসবে।
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা ৩৮টি দলের সঙ্গে লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে থাকবে ইসলামী আন্দোলন ও বাম কয়েকটি রাজনৈতিক দলও। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ইসলামী দলও সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যে তফসিল ঘোষণা হলে বুধবার বিকালেই নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। বিকাল ৩টায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জমায়েত শেষে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল শুরু করবে দলটি। তফসিল ঘোষণা হলে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। তফসিল ঘোষণাকে ঘিরে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এবি পার্টিও।

এদিকে আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া একতরফা তফসিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সমমনা ছয়টি ইসলামী দল। এ ছাড়া বাসদ ও সিপিবিও একতরফা নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচি পালন করবে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নিয়ে বুধবার বৈঠক ডেকেছে নির্বাচন কমিশন। আগামীকাল বিকাল ৫টায় কমিশনের বৈঠকের পর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে তফসিল ঘোষণা করতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

এদিকে তফসিলকে ঘিরে কর্মসূচি নির্ধারণ করতে গতকাল বিকালে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণা হলে তা প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিকভাবে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করবে বিএনপি। এ ছাড়া অবরোধের পাশাপাশি বৃহস্পতি, রবি ও সোমবার হরতালের ঘোষণা দেবে তারা। এদিকে তফসিলকে কেন্দ্র করে গতকাল ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, হাইকমান্ড থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের মধ্যম সারি ও মাঠপর্যায়ের যেসব নেতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে দল। তাদেরকে আন্দোলন সফলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। গ্রেপ্তার এড়িয়ে নেতাদের মাঠে থেকে কর্মসূচি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তফসিলের পর আরও জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া একতরফা আত্মঘাতীর তফসিল ঘোষণা দেশবাসী মানবে না। রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া একটি দলের ইচ্ছা পূরণের তফসিল দেশবাসী মানবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় না নিয়ে সমঝোতাবিহীন তফসিল ঘোষণা হলে নতুন করে দেশে সংকট তৈরি হবে এবং দেশ নিশ্চিত গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হবে।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু মানবজমিনকে বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন জনমত উপেক্ষা করে তফসিল ঘোষণার পদক্ষেপ নিয়ে চরম নির্লজ্জতার পরিচয় দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশে যে অচলাবস্থা ও চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হবে এর পুরো দায়ভার তাদেরকে বহন করতে হবে।

রাজপথে আরও জোরালো আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি মানবজিমনকে বলেছেন, জনগণের দাবি উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন করার জন্য উন্মত্ত হয়ে গেছে সরকার। শেখ হাসিনা তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে অবৈধভাবে তফসিল দেয়ার পাঁয়তারা শুরু করেছে। আমরা কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ার করে দিতে চাই- এই তফসিল নাটক বন্ধ করুন। আগে পদত্যাগ করুন। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ক্ষমতা দিন। এই দলদাস আওয়ামী নির্বাচন কমিশন বাতিল করুন। তারপর তফসিল। দাবি না মানলে পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর।

এলডিপি’র চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম মানবজমিনকে বলেন, সরকার যদি মনে করে তারা এত উন্নয়ন করেছে, তাদের জনসমর্থন আছে, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে কেন। তাদের উচিত- বিএনপি’র দাবি মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করা। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি সিলেকশন কমিশন। তাদের কথায় দেশের ১৮ কোটি মানুষ সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়বে না। তাদের বুঝতে হবে তাদের ক্ষমতা কতোটুকু। যারা দুটি নির্বাচনই সুষ্ঠু করতে পারে নাই তারা ৩০০ আসনে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। তাদের অদক্ষতা অযোগ্যতায় প্রমাণ হয়েছে- তাদের অধীনে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।