গাজায় আল শিফা হাসপাতালে অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইল

অবশেষে মানবাধিকারের সব আইন ভঙ্গ করে গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফার ভিতরে অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। এতে সেখানে অবস্থানরত রোগী, আশ্রয়প্রার্থী বাস্তুচ্যুত মানুষ, হাসপাতালের স্টাফদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছেন, ট্যাংক এবং কমান্ডোদেরকে তিনি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের প্রধান গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে দেখেছেন। আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজম বলেছেন, ইসরাইলি সেনারা আল শিফা হাসপাতালে প্রবেশ করেছে। জরুরি বিভাগ দিয়ে কয়েকশত সেনা ভিতরে প্রবেশ করেছে। বাইরে অবস্থান নিয়েছে ট্যাংক। জবাবে হোয়াইট হাউস বলেছে তারা হাসপাতালের ভিতরে যুদ্ধ দেখতে চায় না। সেখানে আকাশ থেকে কোনো বোমা হামলাও দেখতে চায় না। এ হামলাকে যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছে গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

হাসপাতালে ইসরাইলের অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ইসরাইলের দাবি, ওই হাসপাতালের কমান্ড সেন্টার আছে।

এমনকি সেখান থেকে টানেলের সঙ্গে সংযোগ থাকতে পারে। ইসরাইলের এই দাবিকে সমর্থন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। ওদিকে এই হাসপাতালের একজন ডাক্তার বলেছেন, কমপক্ষে ২০০ মৃতব্যক্তির লাশ গণকবর দেয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে হাসপাতালে হামলার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, আমরা আকাশ থেকে হাসপাতালে বোমা হামলাকে সমর্থন করি না। হাসপাতালে আছেন নিরীহ মানুষ, অসহায় মানুষ, অসুস্থ মানুষ। তাদের স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজন। এসব মানুষ ক্রসফায়ারের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। সেই হাসপাতালে যুদ্ধ দেখতে চাই না আমরা। হাসপাতাল এবং রোগীদের অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে।
হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য ইজ্জত আল রিশেক হাসপাতালে ইসরাইলের অভিযানকে উন্মুক্ত ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, হাসপাতাল একটি বেসামরিক প্রতিষ্ঠান। সেখানে চিকিৎসক, রোগী এবং বাস্তুচ্যুত মানুষ আছেন। এটা কোনো সামরিক টার্গেট হতে পারে না। এর মধ্য দিয়ে তারা তাদের পরাজয় ঢাকতে চাইছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ এনেছে। কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আরদি ইমসেইস আল জাজিরাকে বলেছেন, ইসরাইলকে এখন প্রমাণ দিতে হবে যে এই হাসপাতাল হামাসের ঘাঁটি। হামাস এই হাসপাতালকে ব্যবহার করছে। তারা একটি বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ইসরাইল তার দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যদি কোনো হাসপাতালে থাকা লোকজন কোনো রকম অপরাধ না করেন, মানবিক দায়িত্বের বাইরে অন্য কোনো অপরাধ না করেন, শত্রুদের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর কোনো পদক্ষেপ না নেন, তাহলে সেই বেসামরিক হাসপাতালকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ফিলিস্তিন ও ইসরাইল বিষয়ক পরিচালক ওমর শাকির বলেছেন, এখন পর্যন্ত ইসরাইল সরকার এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি, যাতে হাসপাতালের বিরুদ্ধে তাদের দাবিকে প্রতিষ্ঠা করে। বাস্তবতা হলো গাজায় কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। হাসপাতালে এমন হামলা উচ্চ মাত্রায় বৈষম্যমূলক।