দাম কমলো মোবাইল ইন্টারনেটের, দেনদরবার বিফলে

নানা দেনদরবার করেও শেষ রক্ষা হলো না মোবাইল অপারেটরদের। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপে কমালো ইন্টারনেটের দাম। যা কার্যকর হয়েছে মধ্যরাত থেকে।

নির্বাচনের আগে গ্রাহকদের স্বস্তি দিতে গেলো ৫ নভেম্বর তিনদিনের দামে সাত দিনের ডাটা প্যাকেজ অফার করতে মোবাইল অপারেটরদের নির্দেশ দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। কমাতে বলা হয় ৩০ দিন ও আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজের দামও।

কিন্তু বিষয়টি নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলে মোবাইল অপারেটররা। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বিটিআরসিকে আহ্বান জানায় মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)।

একইসঙ্গে ডেটা প্যাকেজের দাম কমানোর নির্দেশনা নিয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দেয় মোবাইল অপারেটরের প্রধান নির্বাহীরা। তবে তা নাকচ করে উল্টো ডাটার দাম কমাতে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠায় বিটিআরসি। যেখানে ১০ নভেম্বরের মধ্যে নির্দেশনা কার্যকরের কথা উল্লেখ করা হয়।

বিটিআরসির নির্দেশনা মেনে প্রথমেই সাড়া দেয় সরকারি কোম্পানি টেলিটক। এরপর শুক্রবার রাতে নতুন দর কার্যকর করে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক। অপারেটরদের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামীণফোন সাত দিনের এক জিবি ডাটা প্যাকের দাম ৬৯ টাকা থেকে কমিয়ে ৪৮ টাকায় নির্ধারণ করেছে। একই মেয়াদে এক জিবি ডাটা ৫৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৪৮ টাকায় অফার করছে রবি, আবার ৬৮ টাকায় দিচ্ছে ২ জিবির অফারও দিয়েছে। আর বাংলালিংক কৌশলি হয়ে দাম না কমিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে ডাটার পরিমাণ। ৬৯ টাকায় এক জিবির সাথে আরো এক জিবি বোনাস হিসেবে দুই জিবি ডাটা দিচ্ছে তারা।

এরপরই অ্যামটব এক বিবৃতিতে বলে, গত ১৫ অক্টোবর নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশাবলী অনুযায়ী নানাবিধ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অপারেটররা তাদের ইন্টারনেট প্রোডাক্ট পোর্টফোলিও আপডেট করে। দুর্ভাগ্যবশত এর মাত্র ১৫ দিন পরে আবারও প্রোডাক্ট পোর্টফলিও পরিবর্তন করতে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা ইতোমধ্যেই এই জটিল পোর্টফোলিও পরিবর্তন করেছি।

এর আগে গত ১৫ অক্টোবর থেকে বিটিআরসির নির্দেশনা মেনে ৩ ও ১৫ দিন মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ সরিয়ে ফেলে মোবাইল অপারেটররা। কিন্তু সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে এক সপ্তাহ, এক মাস ও আনলিমিটেড মেয়াদের ডাটা প্যাকেজে ২০ থেকে ৩০ টাকার মতো দাম বাড়ানো হয়। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন গ্রাহক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।

দেশের টেলিকম অপারেটরদের উদ্দেশে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হলে দেশের জনগণের পক্ষে থাকতে হবে। ৮ নভেম্বরের মধ্যে টেলিটক এবং ১০ নভেম্বরের মধ্যে অন্য সব অপারেটরকে বৈঠকের নির্দেশনা প্রতিপালন করতে হবে।

আশা করি, অপারেটরদের বোধোদয় হবে। তারা ৯৫টি প্যাকেজকে ৪০টিতে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের দাম বাড়াবেন না। তখন ইন্টারনেটের দাম কমাবেন।

চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ৩ ও ১৫ দিন মেয়াদের মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। দুটি কারণে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি তোলেন মোবাইল অপারেটররা। প্রথমত, তিন দিনের ‘স্যাশে প্যাক’গুলোর গ্রাহক মূলত শিক্ষার্থী, নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রায় ১২ কোটি গ্রাহকের মধ্যে ৩ দিনের ডাটা প্যাকেজ ব্যবহার করেন প্রায় ৭০ শতাংশ। দ্বিতীয়ত, নতুন নিয়মে ইন্টারনেটের দাম বাড়বে বলে জানান অপারেটররা।

তাদের মতে, স্যাশে প্যাক বিলুপ্ত হওয়ার ফলে অনেক গ্রাহক ছুটে যাবে এবং তার ক্ষতি পোষাতে তাদের দাম বাড়াতে হবে। যদিও সেটি আমলে নেয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত দাম বাড়িয়েও আবার আগের দামেই গ্রাহকদের ইন্টারনেট দিতে বাধ্য হয়েছে অপারেটরগুলো।