উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মির্জা ইমতিয়াজ শাওন: আজ (১১ নভেম্বর) নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। একই সাথে কক্সবাজারের ঝিলংজায় ঝিনুকের আদলে তৈরি এশিয়ার সর্ব বৃহৎ আইকনিক স্টেশনও উদ্বোধন করবেন তিনি। এরপর ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে রামু স্টেশন পর্যন্ত যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। উদ্বোধনী যাত্রায় একুশটি বগি নিয়ে কক্সবাজার স্টেশন থেকে ছাড়বে বিশেষ এ ট্রেনটি। যার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে চড়ে রামু পর্যন্ত যাওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বহুল প্রতিক্ষিত রেল লাইন প্রকল্পের। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ট্রেন পথ ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে দোহাজরি পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার পথ বৃটিশ আমলে তৈরি। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় বর্তমান সরকার। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার বিবেচনায় গৃহীত একটি মেগা প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় সংস্কার করা হয়েছে শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন জানান- ২০১৮ সালের জুলাইয়ে দোহাজারি থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণে মেগা প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই মেগা প্রকল্পে ১০২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।
দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিমি, রামু থেকে কক্সবাজার ১৪ কিমি রেলপথ নির্মাণ হয়েছে। রেলপথে স্টেশনের সংখ্যা থাকছে ৯টি। এগুলো হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়ার সাহারবিল, ডুলাহাজারা, ঈদগাও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও ঘুমধুম। এতে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম থাকবে ৯টি, ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম থাকবে ৯টি। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। এ ছাড়া ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট, সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় একটি ফ্লাইওভার, ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং এবং রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং রয়েছে।
কক্সবাজার শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে পর্যটনবান্ধব ও অত্যধুনিক এ আইকনিক রেল স্টেশন। ঝিনুকের আদলে তৈরি দৃষ্টিনন্দন এই স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লক্ষ ৮২ হাজার বর্গফুট। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার আবদুল জাবের মিলন বলেন, সমুদ্র সৈকত থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা এলাকায় ২৯ একর জমিতে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্টেশন। আইকনিক এই স্টেশনটি নির্মাণে চীন, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, ইতালি সহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পটিতে ১১০ জন বিদেশী সহ মোট ২৫০ জন প্রকৌশলী এবং ছয় শতাধিক লোক কাজ করছে। চার বছরের শ্রমে অনন্য সুন্দর রেলস্টেশন ভবনটি আজ দৃশ্যমান।
তিনি বলেন- এই স্টেশন হবে এশিয়ার প্রথম শতভাগ পর্যটনবান্ধব কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছয়তলা স্টেশন। এতে রয়েছে পর্যটকদের জন্য সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা। পর্যটকরা যেন কক্সবাজারে দিনে এসে ঘুরে আবার ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। স্টেশনে রাখা হচ্ছে লাগেজ ও লকার সিস্টেম। এ ছাড়া থাকছে আধুনিক ট্রাফিক সুবিধা। স্টেশনের নিচতলায় থাকছে টিকেট কাউন্টার, অভ্যর্থনা কেন্দ্র, লকারসহ নানা সুবিধা। দ্বিতীয় তলায় শপিংমল ও রেস্তোরাঁ। তিন তলায় থাকবে তারকা মানের হোটেল। থাকছে মসজিদ, শিশু যত্ন কেন্দ্র ও চলন্ত সিঁড়ি। এখনে থাকছে এটিএম বুথ, পোস্ট অফিস, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ সহ নানা সেবা কেন্দ্র।
এই রেল পথ কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পরিপূর্ণতা দেবে। বিদেশী পর্যটক আনতে সহায়ক হবে। শুধু শীতকালে নয়, বর্ষা সহ সারা মৌসুম পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণে উৎসাহিত হবে। ডিসেম্বরের এক তারিখে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে, ‘একটি আন্ত নগর ট্রেন দিয়ে শুরু হবে। পাশাপাশি একটা মেইল ট্রেন দোহাজারী পর্যন্ত চলাচল করে সেটি পরবর্তী সময়ে কক্সবাজার পর্যন্ত আসবে। এরপর পর্যায়ক্রমে মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে।’