সম্প্রতি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক একটি ফিচার চালু করেছে মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নিজেদের পছন্দমতো যে কোনো স্টিকার বানিয়ে শেয়ার করতে পারেন। কিন্তু ফিলিস্তিনি শিশুদের নিয়ে ‘ব্যঙ্গ’ করায় নতুন এই ফিচার নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপের নতুন এআই ফিচারে ‘প্যালেস্টাইন মুসলিম বয়’, ‘প্যালেস্টাইন’ বা ‘প্যালেস্টিনিয়ান’ লিখে সার্চ করলে বন্দুকসহ ফিলিস্তিনি শিশু, মুখ বাঁকা করা কিংবা হামাসের পোশাক পরিহিত স্টিকার আসছে।
ফিচারটি এখনও সব অঞ্চলে উন্মুক্ত হয়নি। তবে গার্ডিয়ান বলছে, হোয়াটসঅ্যাপে স্টিকার তৈরির জন্য সার্চের ফল সব সময় একই রকম না আসলেও, ফিলিস্তিন সংক্রান্ত কিছু লিখলেই সেখানে ‘বন্দুকের বিভিন্ন স্টিকারের ছবি’ আসছে।
অন্যদিকে ‘প্যালেস্টাইন মুসলিম বয়’ এর বিপরীতে ‘জেউইশ বয় ইসরাইল’ লিখে সার্চ করলে ছেলেদের চারটি ছবি আসছে। যার মধ্যে দুটি স্টিকার খেলাধুলা সংক্রান্ত। অন্য দুটিও সাধারণ ছবি।
এমনকি ‘ইসরাইল আর্মি’ সার্চ করলে হাসিমুখ অথবা প্রার্থনাকারী সৈন্যদের স্টিকার আসছে। যদিও সেখানে কোনো বন্দুকের ছবি নেই।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুসারে, ‘মুসলিম প্যালেস্টাইন’ সার্চ করলে হিজাব পরা একজন নারীকে বিভিন্ন ভঙ্গিতে দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি মেটার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রশংসা বা তাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে অনেক ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর পোস্ট তারা সরিয়ে দিয়েছে। আর এখন হোয়াটসঅ্যাপে চালু হওয়া নতুন ফিচারটিতে ফিলিস্তিনের শিশুদের নিয়ে ‘ব্যঙ্গ’ করা হচ্ছে।
ব্যবহারকারীরা বলছেন, গাজায় ইসরাইলি বোমাবর্ষণ অব্যাহত থাকার পরও মেটা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে।
হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচারে ইসরাইল আর্মি সার্চ করলে হাসিমুখ অথবা প্রার্থনাকারী সৈন্যদের স্টিকার আসছে।
এর আগে এক বিবৃতিতে মেটা জানিয়েছে, কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা দৃষ্টিভঙ্গি দমন করা তাদের উদ্দেশ্য নয়।
মেটার মুখপাত্র কেভিন ম্যাকঅ্যালিস্টার বলেছেন, ‘আমরা এই সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতন এবং এটি সমাধানে কাজ চলছে।’
ফিলিস্তিনিদের মতপ্রকাশের বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগে এর আগে ফিলিস্তিনি নির্মাতা, কর্মী এবং সাংবাদিকরা মেটার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছে। বিশেষ করে গাজা এবং পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহিংসতা বা আগ্রাসনের সময়।
২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ সালের মে মাসে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলার সময় ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম তাদের নীতি বিসর্জন দিয়ে ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেটার পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি ব্যবহারকারীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং অধিকারের ওপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলেছে।