মুহূর্তে আনন্দ পরিণত হলো বিষাদে, ইরাকে বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুনে কমপক্ষে ১১৩ মৃত্যু

মুহূর্তের মধ্যে আনন্দ পরিণত হলো বিষাদে। আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেলেন কমপক্ষে ১১৩ জন মানুষ। ইরাকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বিয়ের অনুষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডে এত মানুষের মৃত্যুতে নেমে এসেছে বিভীষিকা। পুড়ে যাওয়া মানুষের অস্তিত্ব নেই। আছে শুধু কঙ্কাল। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে বহুদূর থেকে দেখা গেছে আকাশে অগ্নিশিখা আর কালো ধোয়া। এতে বর-কনে বেঁচে আছেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। কেউ বলছেন, তাদেরও একই পরিণতি ঘটেছে। আবার কেউ বলছেন, তারা বেঁচে আছেন। তারাও অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন।

উদ্ধার করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় নিনেভেহ প্রদেশের আল হামদানিয়া এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন কয়েক শত মানুষ। অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছিল মনোমুগ্ধকরভাবে। ডেকোরেশন করা হয়েছিল। ব্যবহার করা হয়েছিল যেসব জিনিস দিয়ে তা ছিল আগুনে অসহনীয়। ফলে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত তার বিস্তার ঘটে। উপরের ছাদও একই পদার্থে তৈরি। ফলে সামান্য সময়ের মধ্যে তা ধসে পড়ে। এ জন্য লোকজন সরে যাওয়ার সময় পান নি। তাদেরকে জীবন্ত পুড়ে মরতে হয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫০ জন। কি কারণে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত তা জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে আনন্দ করতে আতশবাজি পোড়ানো হচ্ছিল। তা থেকে সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানের মানুষের আর্তচিৎকারে চারপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন, তারা ছিলেন নিরুপায়। কোনোভাবে ভয়াবহ এই আগুন তাৎক্ষণিকভাবে তারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।

ইরাকের সংবাদ সংস্থা নিনা একটি ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায় কয়েক ডজন অগ্নিনির্বাপক আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ছবি পোস্ট করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে বিয়ের অনুষ্ঠানস্থলে সব পুড়ে ছাই হয়ে আছে। ভবনটিতে জনমানুষের কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। ইরাকের সিভিল ডিফেন্স ডিরেক্টরেট বলেছে, অগ্নিকাণ্ডে হলঘরটির অংশবিশেষ ধসে পড়েছে। কারণ এতে দাহ্য পদার্থ, কম দামী জিনিস ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলে দু’এক মিনিটের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। তার ভিতর দিয়ে অগ্নিনির্বাপণকারীদের দেখা যাচ্ছে উদ্ধার অভিযানে ব্যস্ত। বুধবার ভোরে তারা তার ভিতর অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, আগুনের সূত্রপাত স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে। ৩৪ বছর বয়সী ইমাদ ইয়োহানা কোনমতে আগুনের ভিতর থেকে লাফিয়ে বের হয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, আমরা দেখলাম আগুন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পুরো হলে ছড়িয়ে পড়ছে তা। যাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে বের হয়ে এসেছেন। যারা পারেননি তাদের করুণ পরিণতি হয়েছে। যারা বেরিয়ে আসতে পেরেছেন, তাদের অনেকে আহত হয়েছেন। প্রদেশটির গভর্নর হাসান আল আলাক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, কমপক্ষে ১১৩ জনের নিশ্চিত মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৫০ জন। আহতদেরকে নিনেভেহর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গভর্নর আরও বলেছেন, নিহত ও আহতের এই সংখ্যা বাড়তেও পারে। আঞ্চলিক রাজধানী মসুলের পূর্বে হামদানিয়ার প্রধান হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছেন কয়েক ডজন মানুষ। তারা আহতদের জন্য রক্ত দিতে চান। এক্সে (সাবেক টুইটার) ইরাকের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনায় আক্রান্ত সবার জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।