একসঙ্গে বেশি খাবার খেলে শরীরে কী ঘটে?

ঘরে কিংবা বাইরে যেখানেই থাকুন, সেখানে যদি দ্রুত সুস্বাদু খাবারের হাতের লাগালে থাকে তাহলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এ ছাড়া আপনি যদি না জানেন যে আপনি কতটুকু খেতে চান, সেক্ষেত্রেও খাবার খাওয়ার পরিমাণ আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। ফলে শরীরে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

অতিরিক্ত খাবার না খাওয়ার একটি উপায় হলো আপনাকে বুঝতে হবে খাবার আপনার শরীরকে কীভাবে প্রভাবিত করে। এ ছাড়া একসঙ্গে বেশি পরিমাণ খাবার খেলে তা দেহে যেসব পরিবর্তন আনতে পারে তার মধ্যে একটি হলো আরও বেশি ক্ষুধা অনুভব করা। অবশ্য পাকস্থলীর আকার বাড়ে বলেই এমনটি হয় তা কিন্তু নয়। চলুন জেনে নিই অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ৭টি ক্ষতিকারক দিক-

শরীরের অতিরিক্ত চর্বি

আপনার দৈনিক ক্যালোরি ভারসাম্য নির্ধারণ করা হয় আপনি কত ক্যালোরি গ্রহণ করেন আর কত ক্ষয় করেন। আপনি যে পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ আর যদি তার চেয়ে কম পরিমাণ ব্যয় করেন তাহলে বাকি ক্যালোরি আপনার শরীরে অতিরিক্ত চর্বি হিসেবে যুক্ত হতে শুরু করবে। তাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার আপনাকে মোটা করে তুলতে পারে।

ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত

অতিরিক্ত খাবার খাওয়া আমাদের দুটি প্রধান হরমোন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে। এক- ঘেরলিন, যা ক্ষুধাকে উদ্দীপিত করে এবং দুই- লেপটিন, যা ক্ষুধাকে দমন করে।

আপনি যখন কিছুক্ষণ না খেয়ে থাকেন, তখন ঘেরলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। তারপরে, আপনি খাওয়ার পরে লেপটিনের মাত্রা আপনার শরীরকে বলে যে এটি পূর্ণ। তবে অতিরিক্ত খাওয়া এই ভারসাম্যকে ব্যাহত করে। তবে চর্বি, লবণ বা চিনি বেশি খাবার খেলে ডোপামিনের মতো ভাল হরমোন নির্গত হয়, যা আপনার মস্তিষ্কের আনন্দ কেন্দ্রগুলোকে সক্রিয় করে।

রোগের ঝুঁকি বাড়ায়

যদিও মাঝে মাঝে অতিরিক্ত খাওয়া দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে না। তবে দীর্ঘস্থায়ী অতিরিক্ত খাওয়া স্থূলতার দিকে আপনাকে পরিচালিত করে। আর এই পরিস্থিতিতে আপনার শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে পারে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ব্যাহত

অতিরিক্ত খাওয়া মস্তিষ্কের কার্যকারিতার ক্ষতি করতে পারে। বেশ কিছু গবেষণায় বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক পতনের সঙ্গে ক্রমাগত অতিরিক্ত খাওয়া এবং স্থূলতাকে যুক্ত করা হয় যারা কম আহার করেন তাদের তুলনায়।

এ ছাড়া বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্বাভাবিক ওজনের ব্যক্তিদের তুলনায় অতিরিক্ত ওজন স্মৃতিশক্তিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। আপনার মস্তিষ্কে আনুমানিক ৬০ শতাংশ চর্বি রয়েছে। তাই অ্যাভোকাডো, বাদাম বাটার, চর্বিযুক্ত মাছ এবং জলপাই তেলের মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়া মানসিক অবক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

বমি বমি ভাব

নিয়মিত অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব এবং বদহজমের মতো অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের পাকস্থলী আনুমানিক একটি শক্ত মুঠির আকারের এবং খালি হলে প্রায় ২.৫ আউন্স (৭৫ মিলি) ধরে রাখতে পারে, যদিও এটি প্রায় ১ কোয়ার্ট (৯৫০ মিলি) ধরে রাখতে পারে। অবশ্য এই সংখ্যাগুলো আপনার আকার এবং আপনি কতটা নিয়মিত খাচ্ছেন তার ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা

প্রচুর পরিমাণে খাবার খেলে আপনার পরিপাকতন্ত্রে চাপ পড়ে। এতে গ্যাস এবং ফোলাভাব হতে পারে। এ ছাড়া গ্যাস উৎপাদনকারী খাবারের মধ্যে মানুষ যে আইটেমগুলো অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা রাখে তা হলো- মশলাদার এবং চর্বিযুক্ত খাবার এর পাশাপাশি কার্বনেটেড পানীয় যেমন- সোডা। অন্যদিকে মটরশুটি, কিছু শাকসবজি এবং পুরো শস্যও গ্যাস তৈরি করতে পারে, যদিও এগুলো প্রায়শই বেশি খাওয়া হয় না।

ঘুম পেতে পারে

অতিরিক্ত খাওয়ার পরে, অনেকে অলস বা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এটি প্রতিক্রিয়াশীল হাইপোগ্লাইসেমিয়া নামক একটি ঘটনার কারণে হতে পারে। কেননা খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়।