রংপুর যাননি হারুন তদন্ত কমিটির সময় শেষ আজ

শাহবাগ থানা হেফাজতে তুলে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করার ঘটনায় বদলি হওয়া ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের সাবেক এডিসি হারুন অর রশীদ এখনো রংপুর রেঞ্জে যোগদান করেননি। ১২ই সেপ্টেম্বর তাকে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। তিনি কি কারণে সেখানে যোগদান করছেন না বা আদৌ সেখানে যোগদান করবেন কিনা সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা। তবে পুলিশের রংপুর রেঞ্জসূত্র জানিয়েছে, হারুন এখনও সেখানে যাননি। আর ডিএমপি সূত্র বলছে, হারুন জয়েনিং লিভে আছেন। তবে সেটি বেশিদিন নয়। চাকরির নিয়ম মেনে চললে শিগগির তাকে যোগদান করতে হবে।

এদিকে, ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের ঘটনায় ডিএমপি কমিশনারের গঠিত তদন্ত কমিটির বর্ধিত ৫ দিনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে আজ। দু’দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ থাকলেও কমিটির সদস্যরা সময় বাড়িয়ে নেন। কমিটির সদস্যরা বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

দেশজুড়ে আলোচিত এই ঘটনার তদন্তের জন্য ডিএমপি’র ডিসি (অপারেশন) আবু ইউসুফকে সভাপতি ও রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের এডিসি শাহেন শাহ এবং ডিবি মতিঝিলের রফিকুল ইসলামকে সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
ডিএমপি’র সূত্রগুলো বলছে, ঘটনার সূত্রপাত, হাসপাতাল ও থানায় কি ঘটেছিল, এ ঘটনায় কার কতটুকু দায়-অপরাধ আছে সেটি খুঁজে বের করেছেন কমিটি। এজন্য কমিটি এডিসি সানজিদা, এডিসি হারুন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, প্রত্যক্ষদর্শী, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, হাসপাতাল ও থানার সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা,শাহবাগ থানার ওসি, পরিদর্শক, ঘটনার সময় যাদের ডিউটি থানায় ছিল তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রেসিডেন্টের এপিএস আজিজুল হক মামুনের ভূমিকা সেখানে কি ছিল সেটি তদন্তে উঠে এসেছে। মামুন সেদিন কেন সেখানে গিয়েছিলেন। আর কেনই বা ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে সেখানে গেলেন। ঘটনার সময় ধারণ করা ভিডিও পর্যালোচনা করেছেন কমিটির সদস্যরা। এছাড়া ঘটনাস্থলে কথাকাটাকাটির মধ্যে কীভাবে মারধরের সূত্রপাত হলো, কে প্রথম আঘাত করেছেন তদন্তে এসব বিষয়ও উঠে আসবে।

সূত্র বলছে, এডিসি হারুনকে নিয়ে পুলিশের কিছু কর্মকর্তার মধ্যে ভিন্ন মত তৈরি হয়েছে। হারুনের এসব কাণ্ডে কিছু কর্মকর্তা খুবই বিরক্ত। কারণ এর আগেও হারুন বিব্রত হওয়ার মতো কাণ্ড ঘটিয়েছেন। সাংবাদিক, পুলিশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আমানকিকভাবে পিটিয়েছেন। এসব ঘটনাও সারা দেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। অবশ্য এসব নিয়ে তাকে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি। তবে থানায় তুলে নিয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করে দাঁতভেঙে দেয়ার মতো ঘটনাকে কেউ ছোট করে দেখছেন না। কোনো লিখিত অভিযোগ ছাড়া থানা হেফাজতে মারধরের ঘটনায় হারুনকে অবশ্যই বড় শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করছে তদন্ত কমিটি। তদন্তে থানা হেফাজতে যারা মারধরে অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরও শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করা হবে। এছাড়া এপিএস মামুনের ভূমিকায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হবে।

ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (অপারেশন) আবু ইউসুফ মানবজমিনকে বলেন, সময়সীমা নিয়ে আমরা খুবই সচেতন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো নির্ধারিত তারিখের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের।
জানতে চাইলে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের ঘটনায় দুই ধরনের দণ্ড প্রদান করা হয়। একটি লঘুদণ্ড অন্যটি গুরুদণ্ড। লঘুদণ্ডের মধ্যে চারটি বিষয় রয়েছে, গুরুদণ্ডের মধ্যে চারটি বিষয় রয়েছে। কার কতটুকু দায়, তা নিশ্চয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসবে। আর প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।