কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি জাতির শির চির উন্নত করে গেছেন

ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ইউনেস্কো ক্লাব বাংলাদেশ’র সহ-সভাপতি, ব্যারিস্টার সানজীদ রশীদ চৌধুরী বলেছেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি জাতির শির চির উন্নত করে গেছেন। তার আদর্শ ছিল মানুষকে ভালবাসা, মানুষের ভালবাসা। নজরুলের আদর্শকে জাতীয় জীবনে সঠিকভাবে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। কবি নজরুল আমাদের প্রেমের কবি, যৌবনের কবি, মানবতার কবি, সাম্যের কবি ও জাতীয় কবি। কবি নজরুল প্রতিদিনই আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক। বাঙালির জাতীয় জীবনে বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের মতো তিনি আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসে ও বিশ্বাসে প্রাসঙ্গিক। বিশ্বজুড়ে যে নাশকতা চলছে তা রুখে দিতে এসময়ে কাজী নজরুল ইসলামের মতো নির্ভীক ও সাহসী একজন নায়কের খুব দরকার ছিল। গতকাল জাতীয় সাংস্কৃতিক মঞ্চ চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নজরুল শীর্ষক আলোচনা, নজরুল সংগীত ও কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনের সভাপতি কামরুল হুদার সভাপতিত্বে, তিনি অতিথিদের স্বাগত ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যার গান ও কবিতা যুগে যুগে বাঙালির জীবন সংগ্রাম কিংবা স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণার উৎস হয়ে কাজ করেছে। হোক সেটা প্রেম বা বিদ্রোহ, হোক সেটা অভিমান বা না পাওয়া কোনো অনুভূতি- তার মতো এতো দরদ দিয়ে কেউ বোঝায়নি। সময় আর জীবনবোধ, জীবন-উপলব্ধি, সংগ্রামী চেতনা, প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য আর গভীর প্রেমকে মনের এতো গভীর থেকে প্রকাশটাও খুব বিরল। আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো, তবু আমারে দেবো না ভুলিতে- তার এই কথাটি একেবারে অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে। পরিশেষে আজকের অনুষ্ঠান সফল করায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করেন। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম’র শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে সূচিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমাদের জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে যেন মিশে আছেন কবি নজরুল। রমজানের ঈদ উপলক্ষে আমরা তার সেই বিখ্যাত গান ‘রমজানের ওই রোজার শেষে’ শুনে বেড়ে উঠেছি। শুধু তা-ই নয়, এ গানটি না হলে যেন ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণ হয় না। এখনো এই গান না শোনা পর্যন্ত যেন ঈদ মনেই হয় না। উদ্বোধক ছিলেন জাতীয় সাংস্কৃতিক মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও নজরুল গবেষক কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী, তিনি বলেন, বহু সুপরিচিত কবির অনেক মহান সৃষ্টি সংশ্লিষ্ট দেশের শাসক দ্বারা নিষিদ্ধ হয়েছে। হোমারের কালজয়ী সৃষ্টি ‘ওডিসি’র পঠন নিষিদ্ধ ছিল। চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের মতামতকে তাঁর সময়ের তাঁর দেশের শাসকগোষ্ঠী আক্রমণ করেছিল। নিঃসন্দেহে এ তালিকায় কাজী নজরুল ইসলামের নাম যোগ না করলে তা অসম্পূর্ণ থাকবে। সব রকম শোষণের বিরুদ্ধে নির্ভীক কণ্ঠস্বর আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। অনেক সময়ই রাষ্ট্রের চিন্তাশীল মানুষের, দার্শনিক কিংবা মহান স্বাধীনচেতা কবিদের ক্ষমতাধর শাসকগোষ্ঠী, রাজা বা শোষকদের নিষ্ঠুর বৈরিতা ও রক্তচক্ষুর মোকাবিলা করতে হয়েছে। কবির বেড়ে ওঠার সময়ই বিশ্বরাজনীতিতে বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছিল। যেমন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতা আন্দোলন। তাই তো কবি কখনো বিদ্রোহী, কখনো সংস্কারবাদী, কখনো প্রেমিক পুরুষ, কখনো নবীর শান গেয়েছেন, কখনো বা গেয়েছেন শ্যামাসংগীত। কাজী নজরুল ইসলামের সারা জীবনের সংগ্রাম ছিল ধর্মীয় মৌলবাদের বিপক্ষে ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহিদা আকতার জাহান। তিনি বলেন, কাজী নজরুল ইসলামে বাঙালির কবি, সাম্যবাদের কবি, মানবতার কবি, বিদ্রোহের কবি। অসাম্প্রদায়িক সমাজের প্রতিচ্ছবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বাধীনতার কবি বললেও ভুল হবে না। ভারতের আজাদি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর কবিতা ও গান আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তাঁর কারাজীবন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের লড়াই করার পথ দেখিয়েছে। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক যুগ্ম পরিচালক গেরিলা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ, তিনি বলেন, সাহিত্য যে সমাজ বদলের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে, সেটাই ছিল কাজী নজরুল ইসলামের জীবনবোধ। তাঁর চিন্তাধারা ছিল জীবনের সমস্ত অধিকার হারিয়ে জীবন ধারণ করার চেয়ে জীবন দিয়ে জীবন প্রতিষ্ঠা করাই মহত্তর। আর সে জন্যই তাঁকে জেল খাটতে হয়েছিল। আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল’র প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, তিনি বলেন, কারাগারে আমরা অনেকে যাই, কিন্তু সাহিত্যের মধ্যে সেই জেল-জীবনের প্রভাব কমই দেখতে পাই। তার কারণ অনুভূতি কম। কিন্তু নজরুল যে জেলে গিয়েছিলেন, তার প্রমাণ তাঁর লেখার মধ্যে অনেক স্থানে পাওয়া যায়। এতে বোঝা যায় যে, তিনি একজন জ্যান্ত মানুষ। ছালেহ আহম্মদ-হাছান বানু ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান ডাঃ মুহাম্মদ শাখাওয়াত হোসাইন হিরু বলেন, সাহিত্য যে সমাজ বদলের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে, সেটাই ছিল কাজী নজরুল ইসলামের জীবনবোধ। তাঁর চিন্তাধারা ছিল জীবনের সমস্ত অধিকার হারিয়ে জীবন ধারণ করার চেয়ে জীবন দিয়ে জীবন প্রতিষ্ঠা করাই মহত্তর। আর সে জন্যই তাঁকে জেল খাটতে হয়েছিল। কবি সুলতান আহমদ ও আবৃত্তিকার কবি সোমা মুৎসুদ্দীর যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন চসিক মহিলা কাউন্সিলর আমজুমান আরা বেগম, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব দীপক কুমার পালিত, চট্টগ্রাম জেলার নাট্য সংস্থার সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম সাদা, উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সাংস্কৃতিক মঞ্চ চট্টগ্রাম সি. সহ-সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম ছরওয়ার, লালন পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ও লোক সংগীত শিল্পী লূপর্ণা মূৎসূর্দ্দী লোপা, সিনিয়র সংগীত শিল্পী সৈয়দ হোসেন, অধ্যাপক এ কে এম নুরুল বশর সুজন, প্রফেসর ড. বিবেক সূত্রধর, অধ্যাপক কবি জীতেন্দ্র লাল, কবি কেফায়েত উল্লাহ কায়সার, সাংবাদিক ও কবি রোকন উদ্দীন আহমেদ, প্রফেসর ওসমান জাহাঙ্গীর, সাংবাদিক ও লেখক শিব্বির আহমদ ওসমান, যুগান্তরের সাংবাদিক ও নাট্যকার কবির শাহ দুুলাল, গীতিকার আলমগীর হোসাইন, বাংলাদেশ বন গবেষনা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা এয়াকুব আলী, ব্যাংকার মতিউর রহমান ফরহাদী, আবুল কাসেম শিল্পী, সংগীত পরিচালক ফজলুল কবির চৌধুরী, কাজী শাহেদুল করিম, চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ শিল্পী জুয়েল দ্বীপ, সংগীত শিল্পী এস কে মানিক, আয়মান ওসমান, এড: মুসলিম ইসলাম, এডভোকেট এহসানুল হক মিলন, সাংবাদিক কাঞ্চন শীল, আমিনুল হক লিটন, সুধামা দাশ সুজন, মন্টি সরকার, পিউ ঘোষ, আনিস খোকন, বিপুল দাশ, রাজু দাশ, আর্শপা সূত্রধর, বেবী মজুমদার নূপুর, ইসলাম, তাহেরা শারমীন, চবি ছাত্র নেতা কাজেমুল হাসান শাহেদ, পিনকি মল্লিক ফিমো, মো. আবু ইউছুফ সন্দীপী, এ. কে এম মফিজুল হায়দার, কুনসুমা বেগম, আফফান আলিফ হোসাইন, ফারিয়া নিপুন, ফারজানা আফরোজ, তানিয়া সুলতানা, সুপর্না মুৎসুর্দ্দী, প্রিয়াংকা, টিউলিপ, রাধা রানী চৌধুরী, এসডিপি পপি আকতার, সাজীম, মো. ইকবাল, শহিদুল ইসলাম রনি, মো. শিহাব উদ্দিন, আবদুর রহিম, ছাত্রনেতা সুমন বড়–য়া, সূফি মোহাম্মদ ইউসুফ, সোহান বিন জামাল উদ্দিন, মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, জিএম মহিউদ্দিন বুলবুল, মো. কামাল হোসেন, ঝিনু রানী দাশ, নন্দীনি দাশ, সুনন্দা দাশ, রাধেশ্যাম দাশ, উত্তম কুমার দাশ, সুমিতা চৌধুরী, অশোক চৌধুরী, এয়াকুব আলী, রানা বড়–য়া, মোহাম্মদ জসিম, শিহাব আহমদ, পারুল, রানা, মো. মাবজুলুর বারী খসরু, এস এম পারভেজ, আবদুল কাদের, এস এম ফারুক, অরুন দাশ, ফারুক আহম্মদ, শ্যামল ভট্টচার্য্য, আসমাউল হোসনা, জান্নাতুল ফেরদৌস, মিজানুর রহমান, তিথি সাহা, বাবো সাহা, নাজু সাহা, এস এম জয় ও মো. মুরাদ হাসান প্রমুখ। আলোচনা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের নামকরা শিল্পীরা নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন।