ভারত-শ্রীলংকা কূটনৈতিক উত্তেজনার পর কলম্বোতে চীনের যুদ্ধজাহাজ

ঠিক এক বছর আগে চীনের একটি সামরিক জাহাজকে কেন্দ্র করে নয়া দিল্লি ও কলম্বোর মধ্যে তীব্র কূটনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। এরপর শ্রীলংকার নৌবাহিনী বলেছে, চীনের আরও একটি যুদ্ধজাহাজ গত ১০ই আগস্ট কলম্বোতে এসে পৌঁছেছে। ১২ই আগস্ট পর্যন্ত তা কলম্বো বন্দরে নোঙর করে থাকবে। শ্রীলংকার নৌবাহিনীকে উদ্ধৃত করে মিডিয়ায় প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আনুষ্ঠানিক এক সফরে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) নৌযুদ্ধজাহাজ ‘হাই ইয়াং ২৪ হাও’ কলম্বো বন্দরে অবস্থান করছে। এই জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১২৯ মিটার। এতে আরোহী আছেন ১৩৮ জন এবং এর কমান্ডার জিন শিন। মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে এতে বাধা দেয়া হয়েছিল ভারত থেকে। কলম্বোভিত্তিক সংবাদপত্র ডেইলি মিরর ১১ই আগস্ট রিপোর্টে বলেছে, আগে থেকেই এই যুদ্ধজাহাজের সফরের অনুমতি চেয়েছিল চীন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভারতের বাধার কারণে এই অনুমতি দিতে বিলম্ব করে শ্রীলংকা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য হিন্দু।

পত্রিকাটির পক্ষ থেকে শ্রীলংকা সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেছেন, পিএলএর যুদ্ধজাহাজের এই সফর নিয়ে ভারত সরকারি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে কোনো উদ্বেগ জানায়নি।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল নলিন হেরাথ বলেছেন, এই যুদ্ধজাহাজের সফরের বিষয়ে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল ভারত। এ নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি ভারত। শ্রীলংকা ও ভারত অভিন্ন অবস্থানে।
শ্রীলংকা নৌবাহিনীর মুখপাত্র ক্যাপ্টেন গায়ান বিক্রমাসুরাইয়া বলেন, শ্রীলংকার কোনো বন্দরে নোঙর করার ক্ষেত্রে বিদেশি সব নৌযানকে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এ জন্য অনুমতি চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করতে হয় সংশ্লিষ্ট দেশের স্থানীয় দূতাবাসকে। তারপর বিষয়টি নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা শেষে অনুমতি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি শ্রীলংকার নৌবাহিনীকে নির্দেশনা দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদেরকে বলে দেয়, কিভাবে এই কাজটি সম্পন্ন হবে।

শ্রীলংকা সফরের ক্ষেত্রে সমুদ্রযান, বিদেশি সরকার অথবা সামরিক যুদ্ধজাহাজকে কূটনৈতিক ক্লিয়ারেন্স দিতে একটি মানসম্পন্ন অপারেটিং প্রক্রিয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। তা এ বছর ১৭ই জুলাই অনুমোদন করে দেশটির মন্ত্রিপরিষদ।
গত বছর চীনের সামরিক যুদ্ধজাহাজের সফরকে কেন্দ্র করে ভারত ও শ্রীলংকার মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তারপরই রনিল বিক্রমাসিংহে ওই উদ্যোগ নেন। এর আগে চীনের সামরিক যুদ্ধজাহাজের সফরকে কেন্দ্র করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে। তা সত্ত্বেও শ্রীলংকার দক্ষিণাঞ্চলীয় হাম্বানতোতা বন্দরে ২০২২ সালের ১৬ই আগস্ট উপস্থিত হয় চীনের স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং বিষয়ক জাহাজ ইউয়ান ওয়াং ৫। এ অবস্থায় তীব্র কূটনৈতিক চাপে পড়ে চীনকে ওই জাহাজের সফর বাতিল করতে অনুরোধ করে শ্রীলংকা। শ্রীলংকার সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে এ ইস্যুতে কড়া প্রতিবাদ জানায় ভারত।
হাম্বানতোতা এবং কলম্বো বন্দরে তীব্রভাবে সক্রিয় চীন। এ বছর মে মাসে কলম্বো বন্দরে একটি লজিস্টিক কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চায়না মার্চেন্টস গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয় শ্রীলংকা। এর নির্মাণ খরচ পড়বে প্রায় ৪০ কোটি ডলার। ওদিকে শ্রীলংকায় চীনের যুদ্ধজাহাজ ইস্যুতে এক প্রশ্নের উত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, কলম্বো বন্দরে চীনের একটি জাহাজ নোঙর করেছে বলে তিনি রিপোর্ট দেখেছেন। তবে এটি যুদ্ধজাহাজ কিনা সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। অরিন্দম বাগচি বলেন, ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থের ওপর প্রভাব ফেলে এমন যেকোনো পরিবর্তন বা ডেভেলপমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে ভারত। এসব স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয় ভারত।