ইলিশের সন্ধানে গভীর সমুদ্রে গেছে উপকূলের হাজার হাজার জেলে। সপ্তাহ ধরে চলমান বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব কেটেছে গত বুধবার শেষ বিকেলে। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সকাল থেকে শুরু করে শুক্রবার (১১ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত উপকূলের হাজার হাজার মাছ ধরা ট্রলার সমুদ্রে নেমেছে।
৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, উত্তাল সমুদ্র ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভরা মৌসুমেও ইলিশ শিকার করতে পারেনি জেলেরা। এক কথায় বলা যায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও ‘প্রাকৃতিক নিষেধাজ্ঞায়’ মাছ ধরা সম্ভব হয়নি। ইলিশের ভরা মৌসুমে মাছ ধরতে না পেরে হতাশ উপকূলের হাজার হাজার মৎস্যজীবী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ ১৯ দিন হলো সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর মৎস্য অধিদপ্তরের জারিকৃত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে হয়েছে। গত ২৩ জুলাই গভীর রাতে শেষ হয়েছে এ নিষেধাজ্ঞা। এখনও উপকূলের জেলেরা মাছের দেখা পায়নি। অবরোধ শেষে গত ২৪ জুলাই মাছের আশায় সমুদ্রে নামেন জেলেরা। এরপর হঠাৎ সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে। তীব্র ঢেউয়ের তোড়ে সমুদ্রে টিকতে না পেরে জেলেরা শূন্য হাতে ঘাটে ফিরে আসেন। উত্তাল সমুদ্র মাছ ধরার উপযোগী হতে না হতেই শুরু হয় বৈরী আবহাওয়া। সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় জেলেরা মাছ ধরা ট্রলার উপকূলের বিভিন্ন নদ-নদীতে নোঙর করে নিরাপদে অলস সময় পার করছেন।
সমুদ্রে যাওয়ার সময় কথা হয় এফবি তামান্না ট্রলারের মাঝি ইউনূস মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সমুদ্রে গিয়ে এক দিন ফিশিং করে সাগর উত্তাল থাকার কারণে ঘাটে ঘিরে এসেছিলাম। দেড় লাখ টাকা বাজার নিয়ে ৭০ হাজার টাকা বিক্রয় করছিলাম। এরপর ফের সাগরে গিয়ে দুদিন পর আবার ফিরে আসতে হয়েছিল। তখন মাত্র ৩৬ হাজার টাকার মাছ পেয়েছিলাম। সপ্তাহখানেক ঘাটে থেকে এখন আবার যাচ্ছি। মাছ পেলে তো ভালো, না পেলে জেলেদের ধরে রাখাই মুশকিল হবে।
বৈরী আবহাওয়ার সংকেত পেয়ে ঘাটে ফিরে আসার সময় সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়েছে এফবি বিসমিল্লাহ-১ নামের একটি ট্রলার। ট্রলারের ১৬ জন জেলে ঘণ্টাখানেক ভাসার পর এফবি সাবিনা নামের একটি ট্রলার তাদের কূলে নিয়ে আসেন। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে তিন দিন চেষ্টার পর শুধু ট্রলারের ইঞ্জিনটি কূলে আনা সম্ভব হয়েছে। পুরো ট্রলারটি তুফানের আঘাতে তছনছ হয়ে গেছে এবং ট্রলারের জাল সমুদ্রে ভেসে গেছে।
ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝি একলাছ গাজী বলেন, মালিকের একখান ট্রলার ছিল। গত মৌসুমে তেমন মাছ পাইনি। মালিক খলিল খান অত্যন্ত ৩০ লাখ টাকা দেনা। এ বছর ট্রলারখান চলে গেল। মালিক পথে বসে গেছেন। এখনও অন্য কোনো ট্রলারে যাওয়ার কথা হয়নি। আমার সঙ্গে জেলেরা অন্য ট্রলারে সমুদ্রে গেছেন। মাছ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ট্রলার মালিক আবুল কাশেম বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে উত্তাল সমুদ্র ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভরা মৌসুমেও ট্রলার সমুদ্রে যেতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকলে এ ব্যবসায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না। অন্য ব্যবসার চিন্তা করছি। আমার ট্রলার বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সমুদ্রে গেছে। আশা করছি, মাছ নিয়ে ফিরে আসবে।
কলাপাড়া উপজেলা ফিশিং ট্রলার মাঝি সমবায় সমিতির সভাপতি আ. মন্নান মাঝি বলেন, উপকূলের সব ট্রলার এখনও সমুদ্রে গেছে। আশা করছি মাছ পাবে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, গত কয়েক দিনের বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সমুদ্রে যেতে পারেনি। এখন আবহাওয়া সমুদ্রে মাছ ধরার উপযোগী থাকায় জেলেরা গভীর সমুদ্রে চলে গেছে। আশা করা যায় জেলেরা মাছ পাবেন।