ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিসি প্রজেক্টে ঘুরে বেড়ায় শিয়ালের পাল

সর্বত্র কাশবন। সেখানে দিনদুপুরে ঘুরে বেড়ায় শিয়ালের পাল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের হাউজিং প্রকল্পের এই হচ্ছে হাল অবস্থা। যা স্থানীয়দের কাছে ডিসি প্রজেক্ট নামে পরিচিত। প্রায় ৮ বছরেও পূর্ণতা পায়নি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা দেয়ার জন্যে গৃহীত এই প্রকল্প। প্রকল্পের অংশীদারদের অর্ধেকই প্লটের দলিল পাননি। বাকি অর্ধেক প্লট মালিককে জমির দলিল বুঝিয়ে দেয়া হলেও সেখানে কোনো ঘরবাড়ি নির্মাণ হয়নি। যদিও এই প্রকল্পের অভ্যন্তরে সদর উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প সুনসান থাকায় এই মসজিদে প্রতি ওয়াক্তের নামাজে ২/৪ জনের বেশি মুসল্লি মিলছে না। এদিকে অন্যত্র বদলি বা প্লটের উন্নতি না থাকায় অনেকে আবার প্লট বিক্রি বা হস্তান্তর করছেন।

তবে এসব বিষয়ে সমিতির কর্মকর্তাদের সরাসরি তত্ত্বাবধান না থাকায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্লট মালিক বা অংশীদাররা। সমিতির অফিসের ম্যানেজারই হয়ে উঠেছেন সবকিছুর হর্তাকর্তা।
জেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসনের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সমবায় সমিতি লিমিটেড। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন এর উদ্যোক্তা। এরপর ২০১৫ সাল থেকে সমিতির হাউজিং প্রকল্প-১ এর অধীনে জমি কেনা শুরু হয়। শহর বাইপাস সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে ছয়বাড়িয়া এলাকায় মোট ৩৩ একর জমি কেনা হয়। যেখানে সমিতির ৫২০ জন সদস্য প্লট পেয়েছেন। ৮ ও ৫ শতক আকারে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতি শতকের জন্যে মূল্য নেয়া হয় দেড় লাখ টাকা। তবে সমিতি সূত্র জানায়, যারা ৮ শতকের প্লট নিয়েছেন তারা পেয়েছেন ৬ শতক ১৯ পয়েন্ট, আর ৫ শতকের প্লট মালিকরা পেয়েছেন ৩ শতক ৮৭ পয়েন্ট জায়গা। বাকি জায়গা প্রকল্প এলাকায় মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান এবং রাস্তাসহ অন্যান্য প্রয়োজনে কেটে রাখা হয়েছে।

৫২০ জন প্লট বরাদ্দ পেলেও এখন পর্যন্ত দলিল বুঝে পেয়েছেন ২৫৬ জন। প্লটপ্রাপ্ত আজম খান জানান, তিনি ২০১৮ সালে ৮ শতাংশের একটি প্লট বরাদ্দ পান। তবে এখনো দলিল পাননি। কয়েকবার সমিতির অফিসে গিয়ে যোগাযোগও করেছেন। আল আমিন নামের আরেক প্লট গ্রহীতা জানান, তিনি শুরুতেই প্লট নিয়েছেন। ২/৩ মাস আগে দলিলসহ আনুসাঙ্গিক কাজের জন্য সমিতির ম্যানেজারের কাছে লক্ষাধিক টাকা পরিশোধ করেন। গেল ঈদুল আজহার আগেই দলিল দেয়ার কথা ছিল। সমিতির সভাপতি হজে থাকায় ওই সময়ে দলিল পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের একটি প্লটে মাত্র বাড়ি নির্মাণ কাজ হচ্ছে। মসজিদ নির্মাণ কাজের শ্রমিক আউয়াল মিয়া জানান, মেইন সমস্যা রাস্তা। বিদুৎও নেই। ফলে অনেকে বাড়ি করতে এগিয়ে আসছে না।

এদিকে সমিতির এই প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের জন্যে আবেদন জমা আছে আরও এক-দেড়শ’ জনের। তারাও প্লট পেতে ধরনা দিচ্ছেন সমিতির অফিসে। এমন একজন আবুল কালাম আজাদ ভূঁইয়া জানান, দেড় হাজার টাকা ফি দিয়ে আড়াই বছর আগে তিনি আবেদন করেন। তাকে তখন প্লট দেয়ার আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল। দু-আড়াই বছর ঘুরানোর পর এখন তাকে প্লট নেই বলা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলার একটি কক্ষে সমিতির অফিস। সেখানে একজন ম্যানেজার এবং অফিস সহকারী রয়েছেন। সমিতির উল্লেখযোগ্য কর্মকর্তাদের কেউই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত নেই। ফলে ম্যানেজার নূরুল হুদা এখন এই প্রকল্পের হর্তাকর্তা। প্লট পাইয়ে দেয়া, প্লট হস্তান্তরে রফাদফা করার অভিযোগ আলোচনা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সমিতির অফিসে তার সঙ্গে কথা বলার সময় প্লট নিতে সেখানে শহরের কাউতলী থেকে এক গৃহবধূ আসেন তার স্বামীকে নিয়ে। আরেকজন কসবার গোপীনাথপুরের ধজনগর গ্রামের কবির হোসেন। কবির জানান, তার স্ত্রী কিছু টাকা দিয়ে ২০১৮ সালে একটি প্লট নিয়েছেন।

সে বিষয়েই কথা বলতে এসেছেন। তবে সমিতির ম্যানেজার নুরুল হুদা বলেছেন, প্লট বেচাবিক্রির ফাংশনে তিনি জড়িত নন। প্লট হস্তান্তরের নীতিমালা রয়েছে। মারা যাওয়ায় বা অন্যত্র বদলি হওয়ার কারণে ১০/১২টি প্লট হস্তান্তর হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে এসবের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। সমিতির এ সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, সমিতির সদস্য ছাড়া অন্য কেউ হাউজিং প্রকল্পের শেয়ার ক্রয় করতে পারবেন না। শুধুমাত্র সমিতির সদস্য, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি ও নিকট আত্মীয়স্বজনের নিকট প্লট বা শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে। প্লট বা শেয়ার হস্তান্তরে ১০ হাজার টাকা সমিতিকে দিতে হবে। তিনি আরও জানান, প্রকল্পের মাটি ভরাট, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ এবং প্রত্যেক প্লটে ২ ফুট করে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। দলিল করে দেয়ার কাজও এ বছরই শেষ হবে। তবে এসব বিষয়ে তিনি সমিতির একজন কর্মকর্তা ঢাকায় কর্মরত মনির হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।