দিন যতই যাচ্ছে, খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ততই ভয়াবহ হচ্ছে। ক্রমেই মানুষের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা। সরকারিভাবে যে হিসাব সবার সামনে আসছে, তা অত্যন্ত ভয়ানক। কারণ দিনকে দিন যেভাবে অবনতি ঘটছে তাতে বিগত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত খুলনা বিভাগে একদিনে ডেঙ্গু ভর্তি হয়েছিলো ১৩৪ জন। এর একদিন আগে বিভাগে ভর্তি হয়েছিলো ৭৩ জন। এরপর রোববার ভর্তি হয় ১১৯ জন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেখা গেছে ( রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) খুলনা বিভাগসহ দুটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১৭৫ জন। যা এবছরে বিভাগে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৭৫৯ জন এবং মৃত্যু হয় ৬ জনের।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, গত একদিনে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি ২০ জন।
এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হয় ৪৫৬ জনকে। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ২ জনের। এ সময়ের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৯৯ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ৫৫ জন।
খুলনা সিভিল সার্জন ডা. মো. সবিজুর রহমান বলেন, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্খ্য কমপ্লেক্সগুলো ডেঙ্গু পরীক্ষার টাকা সরকারি নির্ধারণ অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট সংকট নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও মশক নিধন কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সচেতনতা ও মশক নিধন ছাড়া এটা প্রতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে তিনি মনে করেন। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় একদিনে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি মধ্যে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে যশোরে ৩২ জন। খুলনা ও মেহেরপুরে ৬ জন করে, বাগেরহাটে ২২ জন, সাতক্ষীরায় ৭ জন, ঝিনাইদহ ১২ জন, মাগুরায় ২৮ জন, নড়াইলে ১৮ জন, কুষ্টিয়ায় ১৯ জন ও চুয়াডাঙ্গায় ৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ২০ জন এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৭৫৯ জন। এ সময়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ২৭৫ জন এবং মৃত্যু হয় ৬ জনের। বর্তমানে খুলনা বিভাগে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৪৩৮ জন এবং রেফার্ড করা হয়েছে ৪০ জনকে।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা বলেন, গত একদিনে খুলনা জেলায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ৬ জন। এর মধ্যে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ২ জন, ফুলতলায় ১ জন এবং রূপসায় ৩ জন ভর্তি হয়। এ সময়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ জন। এ পর্যন্ত ৯৯ জনকে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৭ জন এবং রেফার্ড করা হয় ২ জনকে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এখন আর আগের মতো নেই যে ডেঙ্গু শুধু আগস্টে আসে ডিসেম্বরে চলে যায়। বিষয়টি এমন নয় ডেঙ্গু এখন এপ্রিল মে মাসেও হয়। পাশাপাশি তাপমাত্রা বাড়লে মশার কামড়ানোর হারও বেড়ে যায়। মশা তার প্রতি কামড়ে ডেঙ্গুর জীবাণু মানুষে প্রবেশ করায়, আর যে ভাইরাসটি তাদের শরীরে দ্রুত সংক্রমণ ঘটনায়। যার ফলে ডেঙ্গুর হার দিন দিন বাড়ছে। মশা সারা বছরই ছিল। বৃষ্টিপাত বাড়ায় মশার ঘনত্ব আরও বেড়েছে। আর মানুষের শরীরে ভাইরাসের লোড ছিল। সেটাও ডেঙ্গু ছড়ানোর সুযোগ পেয়েছে।