জানিনা আর কত শোকগাঁথা লিখলে কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে

আহসান লিটন, অধ্যাপক হাটহাজারী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ

আকাশের মন খারাপ।পুরো সপ্তাহজুড়ে অঝোর ধারায় কান্না করছে।চট্টগ্ৰাম বন্যায়‌ প্লাবিত।প্রকৃতির মন খারাপ হলে মানুষের ও মন খারাপ হয়।প্রকৃতির সাথে মানুষের দারুন মিল।সকালে কয়েকদফা চেষ্টা করেও কলেজে যেতে পারিনি।রাস্তার উপর প্রবল স্রোত।দুপুরে ঘুমানোর ব্যর্থ চেষ্টা।এরপরের ঘটনা যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সহকর্মী রাসেলের পোষ্ট দেখে বিষ্ময়ে‌ হতবাক হলাম।ছোট খাট গড়নের মিষ্টি মেয়েটি চিরতরে হারিয়ে গেল।নিপা পালিত আমাদের কলেজে ডিগ্ৰী দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।আজ নাজিরহাট কলেজ কেন্দ্রে যাওয়ার সময় বাড়ির সামনের রাস্তায় তীব্র স্রোতে নালায় পড়ে পা আটকে যায়।জীবনের সব আয়োজন ওখানেই‌ শেষ।পরিবারের সাথে কথা বলে জানলাম শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল।কিন্তু এরপর‌ও সবসময় হাসিখুশি থাকত।মরদেহ যখন‌ আনা হয় পরিবারের গগণবিদারী‌ চিৎকারে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি।বৃষ্টির ফোঁটার সাথে নিজের চোখের পানি একাকার হয়ে যায়।এই মৃত্যুর দায় কাকে দিব?নাকি ভাগ্যকে‌ মেনে নিব।সমগ্ৰ চট্টগ্ৰাম পানিতে তলিয়ে আছে আজ তিনদিন।টিভি ,সংবাদপত্র,মিডিয়ায় পানিবন্দি মানুষের দুর্দশা প্রতিনিয়ত প্রচারিত হচ্ছে।এমতাবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি করে পরীক্ষা চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্তে অটল র‌ইলেন!আমার বোধগম্য নয়।আমরা জনগন,আমরা পাবলিক আপনাদের দয়ায়‌ আমাদের জীবন।আপনারা হর্তা‌ কর্তা‌ ভাগ্য‌ বিধাতা।আপনাদের সিদ্ধান্ত‌ শিরোধার্য‌ ।উপরতলার‌ মানুষের সন্তানরা এই দেশে পড়েনা।পড়ে আমাদের সন্তানেরা,অসহায় নিপা পালিতেরা‌।আপনাদের একটি ভুল সিদ্ধান্ত হাজারো নিপা পালিতের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। পৃথীবিতে সবচেয়ে ভারী বস্তু পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ।এরচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য আর কি হতে পারে?জানিনা আর কত শোকগাঁথা লিখলে কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।নিপা আমাদের ক্ষমা করো।