ফেনীতে বাঁধ ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত

ফেনীতে ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ২০০ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূইয়া। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।

ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ফুলগাজী-পরশুরাম) মো. মনির আহমেদ জানান, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরী নদীতে বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া তিন নদীর বেড়িবাঁধের ২০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ইতিমধ্যে মুহুরী নদীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর দৌলতপুর ও উত্তর বরইয়া অংশে অন্তত ১০ মিটার করে ২০ মিটার ভেঙে গেছে।

ফুলগাজী সদর উপজেলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (সদস্য) জামাল উদ্দিন বলেন, মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ২টি স্থান ভেঙে উত্তর বরইয়া, বিজয়পুর, কিসমত বিজয়পুর, দক্ষিণ বরইয়া, জগৎপুর, উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, বনিকপাড়াসহ অন্তত ১০ গ্রামের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নিচু স্থানের ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত মানুষ।

উত্তর বরইয়া গ্রামের বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, প্রবল বর্ষণ ও পানির তোড়ে ভোর চারটার দিকে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের তার বাড়ির অংশে ১০ মিটার ভেঙে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ প্রকল্পের পাইপ বাঁধের নিচ দিয়ে নেয়ার সময় ভালো করে না হিলানো, বাঁধ সংলগ্ন স্থানে বালু উত্তোলন, বড় ইঁদুরের গর্ত তৈরির কারণে বাঁধ ভেঙে যায়। এতে তার দুই একর জমির রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে।

ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
পঞ্চাশোর্ধ্ব রহিমা বেগম বলেন, ঘরের একদিক দিয়ে পানি ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বের হচ্ছে। নদীর পানি ঘরে প্রবেশ করে আসবাবপত্রসহ সব মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রান্না চুলা পানিতে ডুবে গেছে। সকাল থেকে রান্না করা যায় নি।

উত্তর বরইয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। আমাদের কান্না কেউ শুনতে পায় না।
শিশু শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার বলেন, সকালে হঠাৎ করে বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। ঘরে হাঁটু পরিমাণ পানি। তার বই-খাতা সব পানিতে ভিজে গেছে।

ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার জানান, মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদ-নদীর দু’পাশে ১২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। বাঁধের যে কয়েকটি স্থান ভেঙেছে পানি একটু নেমে গেলে ভাঙন স্থানগুলো মেরামত করা হবে। বাঁধের আর যে কোন স্থান ভাঙতে না পারে সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছে।

ফেনী জেলা প্রশাসক মোছাম্মদ শাহীনা আক্তার বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত মনিটর বরা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করছেন। পানিবন্দিদের শুকনো খাবার বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।