সামরিক হামলা আশঙ্কায় নাইজারের আকাশসীমা বন্ধ

সামরিক হামলার আশঙ্কায় দেশের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে নাইজারের সামরিক জান্তা। প্রতিবেশীরা তার দেশে সামরিক অভিযান চালাতে পারে- এই আশঙ্কায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। ফ্লাইট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪ দেখাচ্ছে, এখন নাইজারের আকাশে কোনো বিমান নেই। এর আগে নাইজারের সামরিক জান্তাকে ডেডলাইন বেঁধে দেয় পশ্চিম আফ্রিকার ১৫টি দেশের সংগঠন ইকোয়াস। তারা জানিয়ে দেয় রোববার স্থানীয় সময় রাত ১১টার মধ্যে প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজোমকে পুনর্বহাল না করলে তারা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে। জান্তা সরকারের এক মুখপাত্রও পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বলেছে, আত্মরক্ষায় প্রস্তুত তার দেশের সেনাবাহিনী।

গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজোমকে ২৬শে জুলাই আটক করে ক্ষমতা কেড়ে নেন জেনারেল আবদু রহমানে তচিয়ানি। তিনি প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের একজন কমান্ডার তখন। পরে তিনি নিজেকে সরকারপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন।

ঘোষণা দেন সামরিক অভ্যুত্থানের। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহল থেকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে এবং হচ্ছে। এর মধ্যে আছে সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাকি দেশগুলো। নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘও। রোববার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সামরিক জান্তার প্রতিনিধির একটি বিবৃতি পড়ে শোনানো হয়। তাতে বলা হয়, নাইজারে একটি ‘বিদেশি শক্তি’ হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে।
নাইজারের এই সংকট নিয়ে প্রতিবেশী নাইজেরিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন ইকোয়াসের সামরিক প্রধানরা। তারা শুক্রবার বলেন, সম্ভাব্য সামরিক শক্তি ব্যবহারের বিস্তারিত পরিকল্পনা নিয়েছেন। ইকোয়ারেস রাজনৈতিক, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক কমিশনার আবদেল ফাতু মুসা বলেছেন, যেকোনো রকম হস্তক্ষেপের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় রসদের বিষয় আছে। শক্তি মোতায়েনের বিষয় আছে। তবু আমরা চাই সমস্যার সমাধান হবে কূটনৈতিক উপায়ে। এই বার্তাটি আমরা নাইজারের সামরিক জান্তার কাছে পৌঁছে দিতে চাই। তারা যা করেছেন, তা থেকে ফিরে আসার জন্য আমরা সব রকম সুযোগ দিচ্ছি।

ইকোয়াস নেতারা নাইজারের সামরিক জান্তাকে এক সপ্তাহ আগে আলটিমেটাম দেন। তাতে নাইজারে বেসামরিক সরকারের কাছে তাদের ক্ষমতা স্থানান্তর করতে বলা হয় রোববার স্থানীয় সময় মধ্যরাতের মধ্যে। সেই সময়সীমা এখন পেরিয়ে গেছে।

ইকোয়াস হলো পশ্চিম আফ্রিকার ১৫টি দেশের আঞ্চলিক বাণিজ্যিক সংগঠন। এর মধ্যে আছে নাইজেরিয়া, সেনেগাল, টোগো, ঘানা প্রভৃতি। তারা আলটিমেটাম দিলেও ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না অভ্যুত্থানের নেতাদের মধ্যে। পক্ষান্তরে রাজধানী নিয়ামে একটি স্টেডিয়ামে কয়েক হাজার সমর্থক তাদের পক্ষে র‌্যালি করেছে।

এর আগে নাইজারের দুই প্রতিবেশী বুরকিনা ফাসো ও মালি সতর্কতা দিয়ে বলেছিল, নাইজারে বাইরে থেকে কোনো সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধী তারা। একে তারা নাইজারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে দেখবে। এ দুটি দেশই ইকোয়াসের সদস্য। কিন্তু সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত হওয়ার পর থেকে তাদের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইউরেনিয়াম উৎপাদন করে নাইজার। পারমাণবিক শক্তি তৈরিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি।