মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের একটি ট্রলার ডুবে ৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে পাঁচজন। সাঁতার কেটে তীরে যেতে সক্ষম হয় ৩৩ জন। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার তালতলা-গৌরগঞ্জ খালের রসকাঠি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ-পুলিশ সদস্যরা।লাশ উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচ মাসের শিশু ও নারী রয়েছে। নিহতরা হলেন- হুমায়রা (৫ মাস), ফারিয়ান (৮), সাকিবুল (১০), মোকশেদা (৪০), হেপি (২৮) , পপি (৩০) , সজিবুল (৪), রাকিবুল (১২)।
শনিবার রাতে ৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও রোববার সকাল ১১টা পর্যন্ত নিখোঁজ ৫ জনের কারো লাশ পাওয়া যায়নি।
এদিকে সকাল থেকে স্বজনদের খোঁজে তালতলা- গৌরগঞ্জ খালের পাশে ভিড় করেছেন স্বজনরা। উদ্ধার অভিযান দেখতে ভিড় জমিয়েছেন উৎসুক জনতা। মৃত ব্যক্তিরা সবাই মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান উপজেলার লতাব্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, দুপুরের সময় একটি ট্রলারে করে জোরে জোরে গান বাজিয়ে পায়ে অর্ধশত নারী পুরুষ পদ্মার দিকে যাচ্ছিল। পরে জানতে পারি পিকনিকে যাওয়ার ট্রলারটি পিকনিক শেষে ট্রলারটি তালতলা-গৌরগঞ্জ খাল দিয়ে লতাব্দির দিকে যাচ্ছিল। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সে পিকনিকের ট্রলারটি আবার ফিরছিল।
ট্রলারটি লৌহজংয়ের রসকাঠি এলাকায় পৌঁছালে একটি জোরে বিকট শব্দ হয়। শব্দ শুনে স্থানীয় আশেপাশের লোকেরা ছুটে গিয়ে দেখে বাল্কহেড ট্রলার টিকে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দেয়। এসময় ট্রলারে থাকা শিশু, নারী সহ সবাই কান্নাকাটি করে । কান্নাকাটি শুনে আশেপাশের লোকজন এসে তাদের অনেককেই উদ্ধার করেছে। ঘটনার সাথে সাথে ট্রলারটি পানিতে তলিয়ে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রসকাঠি এলাকার সাইজুদ্দিন মিয়াজী বলেন, এই খাল দিয়ে বর্ষার সময় একটু পরপরই ট্রলার যাওয়া আসা করে। আমরা দেখছিলাম ট্রলারটি সিরাজদিখানের দিক যাওয়ার সময় হঠাৎ বিকট একটি শব্দ হলো । এরপর মানুষের চিৎকার-কান্নাকাটি শুনে দৌড়ে খাল পাড়ে গিয়ে দেখি ট্রলারটি ডুবে গেছে। তাৎক্ষণিক কয়েকজনকে সেখান থেকে উদ্ধার করি।
মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ট্রলার ডুবির পর থেকেই পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে উদ্ধার কাজ করছে। শনিবার রাত থেকে শুরু করে রোববার ভোর চারটা পর্যন্ত একটানা কাজ চলে। ৮ লাশ উদ্ধারের পর আর কারো লাশ পাওয়া যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক ওবায়দুল করিম খান জানান, স্বজনদের দবি এখনো আর ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন শিশু ও তিনজন নারী রয়েছেন। গতকাল রাত থেকেই তারা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঝখানে এ রাতের বৃষ্টির কারণে কিছুটা সময় উদ্ধার অভিযান ব্যহত হলেও ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে আবারো উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে নিখোঁজদের খোঁজাখুঁজি শুরু করছেন। তবে এখনো কারও সন্ধান পাননি তারা।
তিনি আরো বলেন, ডুবে যাওয়া ট্রলার পাওয়া গেছে। সেটি চেইন এর মাধ্যমে উপরের দিকে টেনে তোলার চেষ্টা চলছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ট্রলারটি উদ্ধার করা যাবে।
মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান মানবজমিনকে বলেন, মৃত ব্যক্তিরা সবাই মিলে সিরাজদিখান লতাব্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা। বাল্কহেডটি আটক করা হয়েছে। বাল্কহেডের চালকসহ বাকিরা পলাতক। পুলিশ তাঁদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালাচ্ছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারের কাজ চলছে।
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন বলেন, ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আরাকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।