জাহেদ কায়সার : চট্রগ্রামে রাতভর টানা বৃষ্টিপাতের ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে । বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে নগরীর মুরাদ পুর,বহাদ্দারহাট,২নং ষোলশহর গেট, আগ্রাবাদ, হালিশহর এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় । যার ফলে নগীরে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন গুলো আটকা পড়েছে ।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা। বিগত কয়েক বছর ধরে নগীর বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা ও খালগুলো সম্প্রসারণ করার কাজ চলমান থাকার কারণে বৃষ্টি আর কাঁদা পানিতে একাকার হয়ে যায়, যার ফলে জীবন জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের মানুষেদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে এ কাজ গুলো প্রায় শেষপর্যায়ে হলেও মুক্তি মিলেনি নগরবাসীর। পূর্বেও মীর্জাখাল, চশমা খালের মতো বড়বড় খালগুলোতে পাহাড়ী ঢলে আসা কাদামাটিতে ভর্তি হয়ে থাকায় এ ধরণের জলাবদ্ধতা দেখা দিতো। এদিকে রাতের ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি উঠে নগরীর বহদ্দারহাট চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের বাড়িতে ও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি উঠেতে দেখা যায়। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরীর বাসিন্দাদের। এলাকাবাসীরা জানান খাল ও নালাগুলো বড় করা হলেও বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা কাদামাটি গুলো সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সচেতন থাকলে ও নালার উপর যে ব্রিজ ও ব্রিজগুলোর মাঝখানে যে ময়লা আটকে গেছে তা দ্রুত সরিয়ে দেয়া উচিত। পানির স্রোতে আসা আটকা পড়া আবর্জনা গুলো সরিয়ে নিলে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবেনা। এতে হয়তো কিছুটা মুক্তি মিলবে নগরবাসীর। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস সুত্রে জানা যায় , শুক্রবার ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে। সকাল ৯টা ১ মিনিট থেকে জোয়ার শুরু হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি যোগ হয়ে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ আবাসিক, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, রিয়াজ উদ্দিন বাজারসহ নগরীর নিচু এলাকার সড়কগুলোতে হাঁটুপানি উঠেছে জোয়ারের সময়। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে মেহেদীবাগ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, ছোটপুল-বড়পুল, গোসাইলডাঙ্গা ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায়।
এসব এলাকার প্রধান সড়কের কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, আবার কোথাও বুক ছুঁই ছুঁই পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়ক ডুবে যাওয়ায় যাতায়াতে ব্যবহার করতে হচ্ছে নৌকা।
বাসায় পানি ঢুকে যাওয়ায় আসবাবপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নষ্ট হচ্ছে। জ্বলছে না চুলা। বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভিজে গেছে বেশকিছু পণ্য।
২০১৭ সালের আগস্টে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। ২০২২ সালে এর ব্যয় বাড়িয়ে ৯ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা করা হয়।
নগরীর ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টির কাজ করা হয় এই প্রকল্পের অধীনে। বাকি ২১টি খালে পানি যাওয়ার পথ নেই। এসব খাল এবং ৫৯টি পয়েন্টের ব্রিজ, কালভার্টে বিদ্যুৎ, ওয়াসা ও গ্যাসের লাইনে ময়লা জমে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।