লবণের দামে শঙ্কা, চামড়া সংগ্রহে সতর্কতা

কোরবানি এলে পশুর চামড়ার দাম কমে যায়, বেড়ে যায় লবণের দাম। এক দশক আগেও মাঝারি আকারের একটি গরুর চামড়া কমবেশি দুই হাজার টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু এখন সেই চামড়ার দাম বড়জোর ৫০০ টাকা। ক্রেতা না পেয়ে চামড়া মাটিতে পুঁতে রাখার ঘটনাও ঘটেছে।

আবার গত ছয় দশকের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হলেও বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ৩০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা এ জন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন। তবে এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।

দেশে পশুর চামড়ার চাহিদার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই পূরণ হয় কোরবানিতে। যে কারণে এ সময়টাকে চামড়া সংগ্রহের মৌসুম বলা হয়। আর ঈদে পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তায় গড়ে ৪ লাখের মতো চামড়া আসে। কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বেশি আড়ত এখানে। কিন্তু এবারে লবণের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।

রাত পোহালেই কোরবানির ঈদ। এরপর থেকেই পশুর কাঁচা চামড়া আসতে শুরু করবে আড়তগুলোতে। তারা সেই চামড়া কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারিতে বিক্রি করবে।

গরম চামড়া সংরক্ষণে সতর্কতা

বেশি গরম কিংবা বৃষ্টি চামড়ার জন্য ক্ষতিকর। এবারে দুটো শঙ্কাই দেখা দিয়েছে। চামড়া সংগ্রহের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কাঁচাচামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান সময় সংবাদকে বলেন, ‘যারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন, তারা লবণজাত করবেন। আমাদের পোস্তায় যারা ব্যবসায়ী আছেন, তারা লবণ সরবরাহ করেছেন। দেশে যথেষ্ট লবণ সরবরাহ আছে, কিন্তু দাম বেশি। তারপরও যারা লবণজাত করবেন, তারা লবণ প্রস্তুত রেখেছেন।’

গরমের কারণে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে চামড়ায় লবণজাত করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বললেন,

আগে চামড়ার মূল মার্কেটটা পোস্তায় ছিল, কিন্তু এখন আমরা বলেছি, যে যেখানে পারে, সেখানেই চামড়ায় লবণজাত করবে। আমরা এই প্রস্তুতির কথা বলে এসেছি। আশা করি—পোস্তা, হেমায়েতপুরসহ সারা দেশে যারা কাঁচাচামড়ার ব্যবসা করেন, লবণ লাগানোর জন্য কারিগরসহ তারা প্রস্তুত আছেন।

লবণের দাম বৃদ্ধিতে চামড়া শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা; জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম দিকে দেখা গেছে, ১৩৫০ থেকে ১৩৮০ টাকার মতো লবণের বস্তা ছিল। আর দুদিন ধরে সেটা একটু কমেছে। এখন ১৩২০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে লবণের বস্তা। ৬০ টাকা কমে আসা অবশ্যই ভালো লক্ষণ।

তিনি বলেন, কেউ যদি চামড়ায় লবণ না লাগায়, তবে তা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে। দামটা বেশি পড়লেও লবণজাত করতে হবে।

ঈদের দিন বৃষ্টি হলে চামড়া সংগ্রহে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা; জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য অত্যধিক গরম যেমন সমস্যা, বৃষ্টিও সমস্যা। এ দুটোই চামড়ার ক্ষতি করে। গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় যখন চামড়া স্তূপ করে রাখা হয়, তখন উপরের চামড়াটা ঠিক থাকে, আর স্তূপের ভিতরের চামড়া অত্যধিক গরম হয়ে নষ্ট হয়ে যায়।’ এ ক্ষেত্রে চামড়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখলে সেটি ঠিক থাকবে বলে জানান তিনি।

এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন,
কাটাছেঁড়া হলে চামড়াটা মূল্য হারায়। সাত-আট ঘণ্টার মধ্যে যদি লবণ দেয়া না হয়, তাহলে সেই চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। সবাই জানি, আমাদের রফতানিতে চামড়া শিল্প একটা বড় স্থান অধিকার করে আছে। আমাদের লক্ষ্য বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করা। সেটা করতে হলে চামড়া সংরক্ষিত রাখতে হবে। এ বছর অনেক বেশি গরম হওয়ায় চামড়া সংরক্ষণ করতে লবণ দেয়ার সময়টা কমে আসবে। আরও তাড়াতাড়ি লবণ দিতে হবে।

‘যে কারণে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, হাট থেকেই যাতে লবণ কেনা সম্ভব হয়। আর আমাদের দেশে প্রচুর লবণ উৎপাদন হওয়ার পরেও দাম যেটা আছে, সেটা যথাযথ না। দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। প্রয়োজনে যারা লবণ মজুত করে রেখেছেন, সেখানেও হানা দেয়া হবে,’ যোগ করেন মন্ত্রী।

সঠিক লবণজাত হলে দামও সঠিক

পশুর চামড়া সঠিকভাবে লবণজাত করা হলে দামও সঠিক হবে বলে জানিয়েছেন বিএইচএসএমএর সভাপতি আফতাব খান। তিনি বলেন,
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গতবারের মতো এবারও বলেছে, ১ কোটি ২৫ লাখ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত। আমরা আশা করি, এবার কোরবানি ১ কোটির কাছাকাছি হতে পারে। এই চামড়া গতবারও সংগ্রহ হয়েছে। এবারও হবে। তবে অত্যধিক গরমের কারণে কিছু চামড়া নষ্ট হয়। সেটা ১০ শতাংশের মধ্যে হলে তা সহনশীল। এর বেশি হলে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না।

তিনি আরও বলেন, ‘এ জন্য যে যেখানে পারে, সে সেখানে যাতে চামড়ায় লবণজাত করেন, সেটিই আমরা বলেছি। কোথাও ১০০ বা ২০০ চামড়া হলেও যাতে লবণজাত করা হয়। আমরা এটাও বলেছি, কোরবানিদাতা যদি আট কেজি লবণ ছিটিয়ে চামড়াটা গ্যারেজ বা গাছের নিচে ছড়িয়ে রেখে দেন, তাও চমড়াটা পচন থেকে রক্ষা পাবে। লবণ সঠিকভাবে লাগালে, দামও সঠিক পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের মাদরাসাগুলো বিরাট ভূমিকা রাখে। আশা করি, মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ আমরা চামড়া সংগ্রহে সক্ষম হব।

কাঁচা চামড়া রফতানি হয় না

সম্প্রতি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী বলেন, ‘ট্যানারি ব্যবসায়ীরা যদি ইচ্ছা করে দাম কমানোর জন্য কারসাজি করেন, তাহলে আমরা কাঁচা চামড়া বিদেশে রফতানির অনুমতি দেব। আমরা আশা করি এমনটি হবে না।’

এমন মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আফতাব খান বলেন, পরে তিনি কথাটি সংশোধন করেছেন। লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার রফতানির পরিবর্তে ওয়েট ব্লু চামড়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ তারা ওয়েট ব্লু চামড়া রফতানি করবেন।

‘সত্যিকার অর্থে শিল্প মালিকরা ওয়েট ব্লু চামড়া রফতানি করবে। গতবারেও পর্যাপ্ত মাল জমে যাওয়ার কারণে পাঁচ-ছয়টি ট্যানারিকে তারা ওয়েট ব্লু চামড়া রফতানির অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু সেটা আবার এখন বন্ধ রেখেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজনে আবার দেয়া হবে, যদি তারা সেটা চায়,’ বলেন আফতাব খান।

তিনি বলেন, ‘কাঁচা চামড়ার রফতানি আমাদের পক্ষে সম্ভব না। কারণ কাঁচা চামড়ার ক্রেতা আসলে নেই। আবার কাঁচা চামড়ার প্রক্রিয়াজাতকরণও আমরা জানি না। ১৯৯০ সালে ওয়েট ব্লু চামড়ার বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আমার জানামতে, ৫০ বছর আগে কাঁচা চামড়া রফতানি হতো। এটা নতুনভাবে রফতানি আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’

পশুর শরীর থেকে প্রথমে চামড়া ও পরে পশম ছাড়িয়ে প্রক্রিয়াজাত করার পর যে চামড়া পাওয়া যায়, সেটিই ওয়েট ব্লু চামড়া। ১৯৯০ সালের আগপর্যন্ত এ ধরনের চামড়া বাংলাদেশ থেকে রফতানি হতো। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে সব সময় চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, জাপান ও স্পেনের মতো দেশে ‘ক্রাস্ট’ ও ‘ফিনিশড লেদার’ রফতানি হয়ে আসছে।

লবণের বাড়তি দাম, সিন্ডিকেটকে দায়ী করলেন ব্যবসায়ী

এবার ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। তবে লবণের দাম কেন বেড়েছে; তা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলতে পারবেন, জানালেন বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির।

দাম বাড়াতে তারাই উৎসাহী বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তার মতে, সিন্ডিকেটের সঙ্গে মিলে লবণের দাম বাড়ানো হচ্ছে। তারা আমদানির অনুমোদন দিচ্ছেন না। এ বছর যেমন রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে, তেমনই দামও সর্বোচ্চ।

চামড়ার লবণের সংকট নেই জানিয়ে তিনি বলেন, একটি সিন্ডিকেট এই দামবৃদ্ধির পেছনে কাজ করছেন। এই ব্যবসায়ী বলেন, যথেষ্ট লবণ মজুত থাকলেও দাম আরও বাড়বে। কয়েকজন ব্যক্তি এই লবণের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের কাছে ব্যবসায়ীরা অসহায়।

‘তাদের (বিসিক) আমরা বলেছি, চাষিদের হাতে লবণ নেই, মজুতদারদের হাতে চলে গেছে। আপনারা এগুলো তুলে আনার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তারা সেটাও করছে না। সম্পূর্ণ অপরিশোধিত লবণ মজুতদারদের হাতে। তারা এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। তারাই কক্সবাজারের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ কারণেই লবণের দাম বাড়তি,’ বললেন নুরুল কবির।

তিনি জানান, লবণের বাজার বাড়তি হওয়ার একমাত্র কারণ হলো, এ মার্কেটে এখন বড়ো বড়ো রাঘব-বোয়ালরা ঢুকেছে। প্রভাবাশালীরা এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ সময়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের স্বেচ্ছাচারিতারও অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, প্রতি বছর তিন থেকে সাড়ে চার লাখ টন লবণের ঘাটতি থাকে। এ বছরও লবণের সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টন লবণের ঘাটতি আছে। দুই থেকে তিন লাখ টন লবণের অনুমতি দিলেই অসুবিধা কী! কিন্তু কোনো অবস্থায়ই লবণ আমদানির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না।

নুরুল কবির বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয় বলবে, লবণের সংকট নেই, ৬২ বছরের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। তাহলে দাম বাড়বে কেন? ৮ লাখ টন লবণ যদি মজুতদারদের হাতে থাকে, তাহলে দাম বাড়বেই। এখন তো লবণের চাহিদা আছে, লবণগুলো মিলে পাঠিয়ে দেয়া হোক। ৮ লাখ টন লবণের মধ্যে ১ লাখ টন পাঠানো কোনো ব্যাপার না। তারা একটি-দুটি ট্রলারে করে পাঠাচ্ছে, আর এভাবে বাজারে দাম বাড়াচ্ছে। গত ১৫ দিন ধরে লবণের দাম বেড়েই চলছে। এটা কমানোর সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি কেজি লবণ উৎপাদন বিসিকের হিসাবে খরচ হয় ৬ টাকা। কিন্তু আমাদের এখানে যে এক-দুই বস্তা পাঠায়, তাও ১৬ টাকা কেজি। ৬ টাকার লবণ যদি প্রক্রিয়াজাত করতে ১৬ টাকা দিয়ে কিনতে হয়, তাহলে এ ব্যবসা আমি কেন করব? তাহলে এটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে, আমি বলতে পারি না? এখানে যদি চাষির স্বার্থ থাকতো, আমি খুশি হতাম। কিন্তু তা-ও হচ্ছে না। গরিব মিলারদের স্বার্থ থাকলেও হতো। কেবল প্রভাবশালীদের একটি সিন্ডিকেট লবণ ব্যবসা থেকে লাভবান হচ্ছে। যার সঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ও জড়িত।’

চট্টগ্রামের সব লবণ মিলগুলো ফাঁকা। কোনো লবণ নেই। বলা হচ্ছে, বৃষ্টির জন্য লবণ তুলতে পারছি না। তাহলে এতদিন লবণ তোলা হয়নি কেন, প্রশ্ন করেন এই ব্যবসায়ী। এ বছরের লবণের মান খুবই খারাপ বলেও জানান তিনি।

নুরুল কবির বলেন, এ জন্যই বলেছিলাম, আমদানির অনুমোদন দেন, তাতে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙবে। কেন ভাঙছে না, সেটা শিল্প মন্ত্রণালয় জানে। এখন বলা হচ্ছে, বৃষ্টির কারণে লবণ তোলা যাচ্ছে না, তাহলে এতদিন কেন লবণ তোলা হয়নি? আমরা বলার পরেও কেউ এই মালগুলো তুলে আনতে নজর দিচ্ছে না। আমাদের লবণের মিলে কোনো লবণ নেই। যেটা আসছে, কোরবানিতে যাতে বাজার অস্থির না হয়, সে জন্য লবণ আসলেই সাথে সাথে ক্রাশ করে বাজারে দিচ্ছি।

সিন্ডিকেট নেই, বলছে বিসিক

তবে সিন্ডিকেটের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক (লবণ সেল প্রধান) সরোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এবারে লবণের দাম গতবারের চেয়ে দুই টাকা বেশি। সিন্ডিকেট এখন নেই। কেউ সিন্ডিকেট করলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিই। কেউ যদি লবণ বেশি মজুত করেন, সেটা আমাদের তদারকিতে আছে। উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে লবণের দাম এই এক-দুই টাকা বেড়েছে।

তিনি বলেন,
প্রতিটি পণ্যের দাম দশ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু লবণের দাম সেই রকম বাড়েনি। প্রথম দিকে চাষিদের কাছে বেশ কিছু লবণ ছিল। পরবর্তীতে আমরা প্রতিটি এলাকায় মনিটরিং করেছি, কার কাছে কতটুকু লবণ আছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা আসার আগে অনেকে লবণ মজুত করে রেখেছেন সাত-আট লাখ মেট্রিক টন। পরবর্তীতে সেই লবণ নিয়মিতভিত্তিতে মিলে যাচ্ছে। কাজেই সেই সরবরাহ চেইনও ঠিক আছে।

‘সব জায়গায় সিন্ডিকেটের কথা বলতে বলতে এখানেও তারা একই কথা বলছেন। আর সিন্ডিকেট হলে লবণের দাম হতো পঞ্চাশ টাকার ওপরে। লবণ ও চালের দাম একসময় সমান ছিল। সেই লবণের দাম এখন কমে গেছে। আসলে এ খাতে ওই রকম সিন্ডিকেট তৈরি হয়নি,’ বললেন সরোয়ার হোসেন।

আমদানির অনুমোদনের ভাবনা ঈদের পর

তিনি বলেন,
আমাদের সব জায়গায় লোক আছে। কারসাজির পাঁয়তারা করার সাথে সাথে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর এবার লবণ উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন, আর চাহিদা হচ্ছে ২৩ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে দেড় লাখ মেট্রিক টনের ফারাক আছে। কাজেই ঈদের পরে এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি বসে আমদানির অনুমোদন দেয়া হবে কিনা; সেই সিদ্ধান্ত নেবে।

তিনি বলেন, এখন অস্থির হওয়ার কিছু নেই। এখন ১০ লাখ মেট্রিক টনের মতো লবণ আছে। যা দিয়ে আগামী পাঁচ মাস চলা যাবে। কাজেই আমদানির বিষয়ে পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা আগেই আমদানির অনুমোদন চাচ্ছেন। আমদানি করলে তো দেশের চাষিদের লাভ নেই। লাভ হবে বড় বড় মিলারদের। কিন্তু আমাদের অবশ্যই দেশীয় চাষিদের কথা ভাবতে হবে। আর ব্যবসার পাশাপাশি আমদানিও একটা ব্যবসা।

তবে ঘাটতি থাকলে আমদানির বিষয়ে সরকার চিন্তা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোরবানি উপলক্ষে আমাদের ১ লাখ মেট্রিক টন লবণের টার্গেট। কিন্তু গত পরশু পর্যন্ত ১ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন ছিল। লবণের কোনো সংকট নেই।

আর চামড়ার দাম ঠিকমতো না পেলে লবণের ওপর দোষ চাপানো হয় বলেও অভিযোগ করেন এই সরকারি কর্মকর্তা।

লবণের কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন,
কারণ এবার লবণের বাম্পার ফলন হয়েছে। পুরো চাহিদা অনুসারে লবণ উৎপাদন হয়েছে। লবণের সাপ্লাই চেইন যাতে ঠিক থাকে, তা নিশ্চিত করতে আমরা তদন্ত করার কথা বলেছি। তবে সিন্ডিকেট আছে কিনা; সে বিষয়ে আমি আসলে কিছু জানি না।