এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র বিদ্যুৎ সংকটে বাংলাদেশ

    ২০১৩ সালের পর থেকে সবচেয়ে তীব্র বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ। বৃটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সরকারি নথি বিশ্লেষণ করে বুধবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বৈরি আবহাওয়া, কমতে থাকা রিজার্ভের কারণে জ্বালানি আমদানিতে ভোগান্তি ও টাকার বিনিময় মূল্য কমে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।

    বাংলাদেশে জুলাই-অক্টোবর বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে। এরইমধ্যে আরো তাপ প্রবাহের পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের জ্বালানিমন্ত্রী সতর্ক করে জানিয়েছেন, আগামী দিনেও দেশে লোডশেডিং অব্যাহত থাকতে পারে। চীনের পরে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। ওয়ালমার্ট, এইচএন্ডএম এবং জারা সহ বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা রয়েছে। বিদ্যুৎ গ্রিডের তথ্য যাচাই করে রয়টার্স জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসের ১১৪ দিন কিছু সময়ের জন্য হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখতে হয়েছে । যেখানে পুরো ২০২২ সালে বন্ধ রাখতে হয়েছে ১১৩ দিন।

    বিশেষ করে সন্ধ্যা এবং সকালের দিকে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। আবাসিক গ্রাহক ও ছোট ব্যবসায়ীরা পূর্ব ঘোষণা ছাড়া ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকার অভিযোগ করছেন।

    ৫ জুন সকালে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের যোগান ছিল ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কম। জুনের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল। অথচ মে মাসে তা ছিল ৫.২ শতাংশ।
    সরকারি তথ্যমতে বিদ্যুৎ ঘাটতির মূল কারণ জ্বালানি সংকট। জাতীয় গ্রিড অপারেটরের ওয়েবসাইট মতে, জ্বালানির অভাবে সোমবার দেশের গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১১.৫ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় এক-চতুর্থাংশ এবং ৩.৪ গিগাওয়াট কয়লা-চালিত কেন্দ্রের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বন্ধ ছিল। অপারেটরের মতে, ডিজেল এবং জ্বালানি তেলে চালিত ৭.৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৪০ শতাংশের বেশির কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

    বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম সংস্থা এপ্রিলের শেষের দিকে এবং মে মাসের প্রথম দিকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি সরবরাহের জন্য অর্থ প্রদানে অক্ষমতার বিষয়ে সতর্ক করে। জ্বালানি তেলের মজুদ নিয়েও উদ্বেগের কথা বলা হয়। বাংলাদেশি টাকার বিনিময় মূল্য গত এক বছরে ছয় ভাগের বেশি কমেছে এবং ডলার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে এক-তৃতীয়াংশ কমে সাত বছরে সর্বনিম্ন অবস্থানে এসেছে।

    গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়ায় কয়লা এবং তরল জ্বালানি চালিত কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। এতে গড় বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। স্থানীয় মজুদ কমে যাওয়ায় এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহকারীদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির অভাবে ২০২২ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম ব্যাপকভাবে বাড়ে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দাম কমে আসায় তার ব্যবহার বেড়েছে। বাংলাদেশ সম্প্রতি কাতারএনার্জির সাথে ১৫ বছরের একটি এলএনজি চুক্তি করেছে।

    ২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ মাসে বিদ্যুতের জন্য কয়লার উপর নির্ভরতা বেড়ে ১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, ২০২২ সালে যা ছিল ৮ শতাংশ। ২০২২ সালে জ্বালানি তেল ও ডিজেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন এক দশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল।