বঙ্গবন্ধু ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন

চবিতে ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী

চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনার ০৪ জুন ২০২৩ বেলা ১১:৩০ টায় চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ভাষণ দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, এম.পি.। সেমিনারে সভাপতিত্বে করেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। এতে মুখ্য আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে, চবি কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক ও চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন চবি প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এম.পি. তাঁর বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মায়াবী ক্যাম্পাসে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন এবং একইসাথে এ ধরণের একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ও বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার আয়োজন করায় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ; এ তিনটি শব্দ একটি অপরটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মাননীয় মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন সাহসী বীর পুরুষ, জীবনে কখনও কোনো অন্যায়ের সাথে তিনি আপোষ করেননি। শত প্রতিকূল-প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও তিনি তাঁর নিদিষ্ট লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। বাঙালি জাতির এ অবিসংবাদিত নেতার আহবানে এবং তাঁরই সুযোগ্য নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে সশস্ত্র পাকিস্তানি হায়েনাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বিশ^ মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের পরাজিত শত্রুরা জাতির পিতার স্বপ্ন এবং তাঁর আদর্শকে চিরতরে মুছে ফেলতে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে তাঁকে নির্বংশ করার জন্য যে নীলনকশায় মেতে উঠেছিল, তাতে তারা সফল হয়নি। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেদিন মৃত্যুভয়কে দূরে ঠেলে দেশমাতৃকার টানে ও দেশ রক্ষায় জন্মভূমিতে ফিরে এসেছিলেন। দেশে ফিরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে অদম্য সাহস, দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং দেশপ্রেম নিয়ে জাতির উন্নয়নে নিরন্তর নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তাঁরই যোগ্য নেতৃত্ব, নিরলস প্রচেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি দেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বিশে^র বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলেছেন। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে তিনি এ কাজটি করে চলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সে লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে আমাদের দরকার স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থা। মাননীয় মন্ত্রী উন্নত বিশে^র নব নব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সৃজনশীল ও প্রায়োগিক শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান তৈরির মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রমকে অধিকতর বেগবান করার আহবান জানান। তিনি মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ অনুষদের নবনির্মিত একাডেমিক ভবন উদ্বোধন প্রসংগে বলেন, তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকাকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়ের যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে দেশের প্রথম সামুদ্রিক বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আধুনিকায়নে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করা হয়। এরফলে সুনীল অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। পরে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ‘চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজের গবেষণা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নির্মিত একাডেমিক ভবনের শুভ উদ্বোধন করেন এবং উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। পূর্বাহ্নে মাননীয় মন্ত্রী চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় বিএনসিসি’র একটি চৌকষ দল মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।

মাননীয় উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানান। একইসাথে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী শত ব্যস্ততার মাঝেও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে শুভাগমন করে বিশ^বিদ্যালয় পরিবারকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করায় মাননীয় মন্ত্রীকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝেও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন এগিয়ে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে মেরিন সায়েন্সের এন্ড ফিশারিজ অনুষদের নবনির্মিত একাডেমিক ভবনের শুভ উদ্বোধন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য আজকের দিনটি অত্যন্ত আনন্দ ও গৌরবের। মাননীয় মন্ত্রীর পরামর্শের আলোকে মাননীয় উপাচার্য বলেন, চবি আইকিউএসি’র সার্বিক ব্যবস্থাপনায় চবির শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়মিত অব্যাহত আছে। ভবিষভ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে মর্মে মাননীয় উপাচার্য প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। আজকের অনুষ্ঠান সফল ও সার্থক করতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন বিশেষকরে অনুষ্ঠান উদযাপনের মূল কমিটি, বিভিন্ন উপকমিটি, বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সম্মানিত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যবৃন্দ, প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে মাননীয় উপাচার্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। মাননীয় উপাচার্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে উপাচার্যের রচিত কয়েকটি গ্রন্থ উপহার হিসেবে প্রদান করেন। এ ছাড়াও চবি গবেষণা পরিচালনা ও প্রকাশনা দপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন আদর্শ ও কর্ম’ শীর্ষক গ্রন্থ মাননীয় মন্ত্রীকে উপহার হিসেবে প্রদান করেন গবেষণা পরিচালনা ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক। চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর সুফিয়া বেগম ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষকবৃন্দ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি উপহার হিসেবে প্রদান করেন।
চবি সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সূচিত হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চবি ইংরেজি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. সুকান্ত ভট্টাচার্য ও চবি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. নাজনীন নাহার ইসলাম। অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন চবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন চবি রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন চবি পালি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব অরূপ বড়ুয়া এবং পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন চবি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক জনাব জেসী ডেইজী মারাক। অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধান অতিথি এবং অতিথিবৃন্দকে পুস্পস্তবক দিয়ে বরণ করা হয়। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দৃষ্টিনন্দন ব্যানার, ফেস্টুন ও আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। বিশেষকরে জাতির পিতা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, হলের প্রভোস্টবৃন্দ ও আবাসিক শিক্ষকবৃন্দ, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটির সদস্যবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ, অফিসার সমিতি, কর্মচারি সমিতি, কর্মচারি ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থীবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ও সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।