৫০ বছরেও নির্মিত হয়নি প্রতিশ্রুত খোয়াই সেতু

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার কলিমনগর সংলগ্ন চরহামুয়া গ্রামে খোয়াই নদীর উপর একটি সেতুর অভাবে ২০ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার অধিবাসী ৫০ বছর ধরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পেহাচ্ছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক জনপ্রতিনিধি এ সেতুটি নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আশপাশের লোকজন ৫০ বছর ধরে এ সেতুটির অপেক্ষায় দিন গুনছেন। খোয়াই নদীর পশ্চিম পারে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার চরহামুয়া গ্রাম পূর্ব পারে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চরহামুয়া গ্রাম। এই দুই উপজেলার গ্রামগুলোকে যুক্ত করেছে একটি রশি। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার চরহামুয়া গ্রামের খোয়াই নদীর উপর প্রতিশ্রুত সেতুটি ৫০ বছরেও নির্মাণ করা হয়নি। দৃশ্যত এই দুই গ্রামকে দু’ভাগ করে রেখেছে খোয়াই নদীটি। কিন্তু এখানে নেই পারাপারের কোন সেতু।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর এপার ওপার উভয় পাড়কে সংযুক্ত করে টানানো হয়েছে একটি মোটা রশি। ছোট্ট একটি নৌকার যাত্রীরা টানানো দড়ি ধরে টেনে টেনে নদীর এপার থেকে ওপারে যাচ্ছেন। ওই রশিকে অবলম্বন করে ছোট নৌকায় দিনে-রাতে নদী পার হচ্ছে দুই পারের মানুষজন।

একটি মাত্র সেতুর অভাবে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।
জানা যায়, কেনাকাটা, চিকিৎসা ও দাপ্তরিক কাজসহ নানান প্রয়োজনে চরহামুয়াসহ আলাপুর এলাকাবাসীকে যেতে হয় শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জে। তাছাড়া উপজেলার শতবর্ষী শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ, মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, ব্যাংক ও হাসপতালে যেতে হলে এলাকাবাসীকে খোয়াই নদী পার হতে হয়। নদীর বুকে রশি দিয়ে ছোট নৌকা টেনে টেনে প্রতিদিন শতশত মানুষ পারাপার হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। বর্ষা মৌসুমে যখন বানের পানিতে নদীটি ভরে টইটুম্বুর হয়ে যায় তখন নদী পারাপারে জীবনের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে যে পানি থাকে তাতে ঠিক মত নৌকা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর দাবি, খোয়াই নদীর ওপর একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হলে পাল্টে যাবে নদীর উভয় পারে বসবাসরত ৪০ হাজার মানুষের জীবনব্যবস্থা।

শায়েস্তাগঞ্জ পৌরশহর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে কলিমনগরে অবস্থিত খোয়াই নদীর চরহামুয়া খেয়াঘাট। চরহামুয়া, বনগাঁও, নোয়াবাদ, বাতাসর, কলিমনগর, সুঘরসহ প্রায় ২০ গ্রামের শতশত স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে প্রতিদিন শায়েস্তাগঞ্জে আসতে হয়। এখানে সেতু না থাকায় সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলোর কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমুল্য পাচ্ছেন না তারা। তাছাড়া মুমূর্ষু রোগীর জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও এই নৌকাই গ্রামের মানুষগুলোর একমাত্র ভরসা।

ওই এলাকার লোকজন বলেন, এখানে একটি সেতুর জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে এলাকাবাসীসহ বহুবার আবেদন করা হয়েছে। তারা আরো বলেন, নির্বাচন আসলে আমাদের কদর বাড়ে। প্রার্থীরা অনেকবার সেতুটি তৈরী করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কোনকালেই সেতুটি তৈরীর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ওই এলাকার খোয়াই নদীর উভয় পাশের মানুষের প্রাণের দাবি সেতুটি তৈরী করা হোক। এই সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি বহুবার বহুজন দিয়েছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এ সেতুটি নির্মাণে উদ্যোগ নেয়নি কেউ।

দক্ষিণ চরহামুয়া গ্রামের মাদ্রাসার অধ্যাপক নজরুল আলম বলেন, এ সেতুটি নির্মাণ করা হলে, উভয় চরহামুয়া, বনগাঁও , সুঘর, নোয়াবাদ এবং লস্করপুরের হাজার হাজার মানুষ, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী সকলের যাতায়াত সুগম ও নিরাপদ হবে। বিশেষ করে ওই এলাকার কৃষিজীবী মানুষ তাদের কৃষিপণ্য স্থানান্তর করতে পারবেন। এতে তাদের ঘাম ঝরানো উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পাবেন।

দক্ষিণ চরহামুয়া নিবাসী বস্ত্র ব্যবসায়ী, মুনাজেরা আহমেদ সুজন বলেন, আমরা শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকায় স্থায়ীভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করি। ওই নদী পার হয়ে প্রতিদিন আমাদের আসা যাওয়া করতে হয়। এমনকি জেলা শহর হবিগঞ্জ যাতায়াতেও আমাদের এ নদী পার হয়ে যেতে হয়। আমাদের এলাকায় সারা বছর কৃষিপণ্য উৎপাদন করা হয়। নদী পারাপারে কলিমনগর চরহামুয়া সেতুটি নির্মাণ করা হলে ওই এলাকার কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা সহজ হবে। এতে কৃষিজীবী মানুষ যারপরনাই উপকৃত হবে।