টাইব্রেকারে আবাহনীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান

৮ গোলের রোমাঞ্চকর ফাইনাল
বহুদিন পর রোমাঞ্চ ছড়ানো ফাইনাল উপহার দিলো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল আবাহনী- মোহামেডান। কুমিল্লার ধর্মসাগরের পূর্বপাড়ে অবস্থিত ‘ভাষা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে নির্ধারিত সময়ে ৩-৩ ড্র ছিল ম্যাচ। অতিরিক্ত সময়েও দুই দল সমান। একটি করে গোল করে মোহামেডান-আবাহনী। ১৪ বছর পর দুই দলের ফাইনাল গড়ায় টাইব্রেকারে। সেই টাইব্রেকারে ভাগ্য খুলে মোহামেডানের। আবাহনীকে ২(৪)-৪(৪) ব্যবধানে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন হয় সাদা-কালো শিবির।

২০০৯ সালে শেষবার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। সেই ফাইনালের পর দীর্ঘ ১৪ বছরে ফেডারেশন কাপ হয়েছে ১১টি। আবাহনী ৫ বার ফাইনালে উঠে পাঁচবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সবশেষ আসরটিরও চ্যাম্পিয়ন আকাশী-হলুদ শিবির।

দীর্ঘ সময়ে আর ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলতে পারেনি মোহামেডান। এ কারণেই ১৪ বছর পর ফের সাক্ষাতে ২০০৯ সালের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে সাদা-কালোরা। ফেডারেশন কাপের ৪৩ বছরের ইতিহাসে ফাইনালে প্রথম হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস গড়েন মোহামেডান স্ট্রাইকার ও অধিনায়ক সোলেমান দিয়াবাতে। মোহামেডানকে ‘জীবন’ দিয়ে বারবার ম্যাচ ফিরিয়ে এনেছেন তিনিই। তার কারণে ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে মোহামেডানের পাঁচ শটের মধ্যে একটি মিস হয়। টাইব্রেকারে মোহামেডানের হয়ে গোল করেন সুলেমানে দিয়াবাতে, আলমগীর কবির রানা, রজার ও কামরুল ইসলাম। তৃতীয় শটে শাহরিয়ার ইমনকে আটকে দেন গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল। বিপরীতে শুরুতে আবাহনীর রাফায়েল অগাস্তোর শট আটকে দেন আহসান হাবিব বিপু । এমেকা ও ইউসেফ মোহাম্মদ গোল করলেও কলিনদ্রেসের শট রুখে দিয়ে দিয়ে নায়ক বনে যান মোহামেডানের এই বদলি গোলরক্ষক।
গতকাল কুমিল্লায় ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে এগিয়ে ছিল আবাহনী। মোহামেডান ঘর সামলে চেয়েছে কাউন্টার অ্যাটাকে যেতে। ম্যাচের ১৬তম মিনিট পর ফর্মের প্রমাণ রেখে আবাহনীকে এগিয়ে নেন তরুণ ফরোয়ার্ড ফাহিম। কলিনদ্রেসের কাছ থেকে বল পেয়ে এমেকা ওগবা ডিফেন্স চেরা পাস বাড়ান। চলন্ত বলে ফাহিমের বাঁ-পায়ের শট মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন হোসেনের গ্লাভস ছুঁয়ে জালে জড়ায়। পিছিয়ে পড়া মোহামেডান তখন বেশ অগোছালোই ঠেকেছে। সুযোগটা কাজে লাগান কলিনদ্রেস। ৪৩ মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে হৃদয়ের বাড়ানো বল আয়ত্তে নিয়ে মার্কার হাসান মুরাদকে কোনো সুযোগ না দিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে বল দূরের জালে জড়িয়ে দেন কোস্টারিকান তারকা। যোগ করা সময়ে কলিনদ্রেসের ফ্রি-কিক সুজনের গ্লাভস ছুঁয়ে পোস্ট কাঁপিয়ে বাইরে যায়। বিরতি থেকে ফিরে মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদ তিনটি পরিবর্তন করে মাঠে পাঠান জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার ইমন ও আলমগীর রানাকে। তাতেই গতি পায় মোহামেডানের আক্রমণের। ৫৬ মিনিটে ২-১ করেন দিয়াবাতে। কামরুলের ক্রস হেড করে ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি আবাহনী ডিফেন্ডার আলমগীর মোল্লা। বক্সে বল পেয়ে তাতে দিয়াবাতের সাইডভলি জালে জড়ায়। ৬০ মিনিটে সমতাসূচক গোলটিও দিয়াবাতের। উজবেক মিডফিল্ডার মোজাফফরভের জোরালো ভলি সোহেল রুখলেও বাঁ-দিকে জাফর ইকবাল পেয়ে দ্রুত ক্রস ফেলেন গোলমুখে। মার্কারদের ছাড়িয়ে দারুণ হেডে সোহেলকে পরাস্থ করে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন দিয়াবাতে। ম্যাচের ৬৬তম মিনিটে ডানদিক থেকে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের শট সুজন কোনোমতে সেভ করলেও এমেকা আলতো ট্যাপে গোল করে আবাহনীর লিড পুনরুদ্ধার করেন। তবে ৮৩ মিনিটে কামরুলের কর্নারে দিয়াবাতে হ্যাটট্রিক করে মোহামেডানকে আবার ম্যাচে ফেরান। যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে রাজীব হোসেন রাফায়েলের গড়ানো শট ঠেকিয়ে না দিলে ম্যাচটা হয়তো অতিরিক্ত সময়ে যেতো না। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে পেনাল্টি পেয়ে যায় মোহামেডান। ১০৮ মিনিটে সেখান থেকে নিজের চতুর্থ গোল আদায় করে দলকে এগিয়ে নেন তিনি। ১১২ মিনিটে চোটে পড়েন মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন। তাকে নেমে যেতে হয়। তার বদলি হিসেবে নামেন দীপু। তারপরই রহমতের গোলে সমতায় ফেরে আবাহনী (৪-৪)। সেখান থেকে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। ট্রাইব্রেকারে ফাইনাল জিতে ফেডারেশন কাপের ১১তম ট্রফি ঘরে তোলে সাদা-কালোরা। ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপে মোহামেডান ফাইনালে উঠেছিল। আর তাতে মোহামেডানকে যেভাবে কাপ উপহার দিলেন দিয়াবাতে এবং তার সতীর্থরা, তা অনেক দিন মনে রাখার মতো। বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলে অনেক রুদ্ধশ্বাস ফাইনালই হয়েছে। এটি সর্বকালের সেরা কি না, এমন আলোচনাও উঠে পড়েছে।
এক নজরে ফেডারেশন কাপ ২০২২-২৩

চ্যাম্পিয়ন- মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব
রানার্সআপ- ঢাকা আবাহনী লিমিটেড
সর্বোচ্চ গোলদাতা-সুলেমান দিয়াবাতে
(৮ গোল-মোহামেডান)
ম্যান অব দ্য ম্যাচ-সুলেমান দিয়াবাতে (মোহামেডান)
টুর্নামেন্ট সেরা-সুলেমান দিয়াবাতে (মোহামেডান)
ফেয়ার প্লে- বসুন্ধরা কিংস