তেল, চিনি, সবজি ও ডিমের চড়া দামে অস্বস্তি

রাজধানীর বাজারে চিনি, ডিম, আদা, মাছ-মাংস চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকায় ওঠা পিয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি। পিয়াজের পর এখন আবার বেড়েছে আদার দাম। এদিকে গত সপ্তাহের চেয়ে মাঝারি ও মোটা চাল কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা। একটু বাড়তির দিকে মুরগির ডিমের দাম। বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ ভালো হলেও দাম বেশি। বেশির ভাগ সবজির দামই কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। মুদি বাজারে তেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ অন্য বেশকিছু পণ্য বাড়তি দামে আটকে রয়েছে। চিনির বাজারে পুরোপুরি স্বস্তি ফেরেনি। মাঝে কয়েকদিন প্যাকেটজাত চিনি দেখা গেলেও এখন আবার আগের মতো ‘নাই’ হয়ে গেছে।

তবে খোলা চিনি পাওয়া যাচ্ছে। সরকার ১২০ টাকা দর বেঁধে দিলেও বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে। প্রতি কেজি বোতলজাত সয়াবিন তেল ২০০ টাকা এবং মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, খেসারির ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা, খোলা আটা ৫৭ টাকা ও খোলা ময়দা ৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে মসলার বাজারে আদার দামে অস্থিরতা কাটেনি।
বাজারে চীনা আদা মিলছে না। তবে অন্য দেশের আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। অথচ গত বছর এ সময় ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে এখন আদার দাম তিনগুণ বেশি। ঈদুল ফিতরের পর থেকে বেড়েছে কেজিতে মানভেদে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। আমদানি করা চীনা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা ৩০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। এবার বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ফলে চালের দাম এখন নিম্নমুখী থাকার কথা। তবে বাজারে গত সপ্তাহের চেয়ে মাঝারি ও মোটা চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর কাওরান বাজারে মাঝারি চালের (পায়জাম ও লতা জাতীয়) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা। এ ছাড়া মোটা চালও (গুটি স্বর্ণা, চায়না ইরি) কেজিতে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। গত সপ্তাহে এ ধরনের চাল কেনা গেছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়। তবে সরু বা মিনিকেট চাল উচ্চমূল্যে স্থির হয়ে আছে।

সপ্তাহ দুয়েক ধরে মুরগি ও ডিম উচ্চমূল্যে উঠে স্থির হয়ে আছে। ব্রয়লারের কেজি ২০০ থেকে ২১০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ডিমের ডজন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। এদিকে বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ও সাদা ডিম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। বাদামি রঙের ডিম প্রতি ডজন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা ও সাদা রঙের ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা রাখা হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় বাদামি ডিমের হালি পড়ছে ৫০ টাকা। এ ছাড়া বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা দরে। খাসির মাংসের দাম প্রতি কেজি ১২৫০ টাকা। বকরির মাংস ১০০০ টাকা। মাছের বাজারে প্রকারভেদে সাধারণ চাষের মাছগুলোর দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত। ইলিশ-চিংড়ির পাশাপাশি দেশি (উন্মুক্ত জলাশয়ের) মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে চাষের পাঙ্গাশ-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে।

আগে বাজারে প্রতি কেজি পাঙ্গাশ বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা এখন ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় ঠেকেছে। তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, যা আগে ১৮০-২০০ টাকায় কেনা যেতো। মাছ বিক্রেতা কালাম জানান, প্রতি কেজি চিংড়ি ৬০০-১০০০ টাকায় বিক্রি করছেন। যা আগে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতেন। অন্য চাষের মাছগুলোও বেশ বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাজা রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজিতে, যা আগে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা ছিল। বাজারে সাধারণত গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা ব্রয়লার মুরগি এবং পাঙ্গাশ-তেলাপিয়া মাছের পরে বেশি নির্ভরশীল। তাদের মধ্যে অনেকে এসব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রিকশাচালক খায়রুল বলেন, একটা দিন যে ভালো-মন্দ খাবো, সেই উপায় নেই। দিনে যে কয় টাকা আয় করি, তার মধ্যে যদি ২৫০ টাকার মাছ কিনি, অন্য খরচ কী দিয়ে হবে? প্রায় এক মাস ধরে প্রতিটি সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। আগে যদি এক কেজি সবজি কিনতাম এখন বাড়তি দামের জন্য আধা কেজি করে কিনি। কিন্তু বাজারে আসলে হিসাবে মেলে না।

বাজারে গ্রীষ্ম মৌসুমের সবজির সরবরাহ ভালো হলেও দাম চড়া। প্রতি কেজি বেগুন, করলা, বরবটি, ঝিঙা, পটোল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা দাগে ৬০ টাকার নিচে এক কেজি সবজি মিলছে না। বাজারে কয়েকটি সবজির দাম সামান্য কমলেও বেশির ভাগ সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। পেঁপে ৮০ টাকা, বেগুন ৭০-৮০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা, কাঁকরোল ৯০ টাকা, গাজর ৮০-১২০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, পটোল ৮০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, সজনে ১৫০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১৬০ টাকা, লাউ ৭০-৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ১০০-১২০ টাকা, ধনেপাতা ১২০-১৫০ টাকা কেজি।

এ ছাড়া বাজারে আলু ৪০ টাকা, পিয়াজ ৭৫-৮৫ টাকা, আদা ২৬০-৩২০ টাকা ও রসুন ১৬০-১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, কিছুদিন আগেও আমদানি করা আদা বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকায়। আর এক মাস আগে এই আদা বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। সেই সঙ্গে গত বছরের এই সময় আদা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। বাজার করতে আসা মান্নান বলেন, সবজির দাম কমছে না। আলু কিনতাম ত্রিশ টাকা করে, এখন চল্লিশ টাকা করে। তিনি বলেন, বর্তমানে মাছ-মাংস সব কিছুরই দাম বেশি। কোনো কিছুর দামই কম না। রামপুরার বাসিন্দা আনাস বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম গত এক বছরে যেভাবে বেড়েছে, তাতে স্বামী-স্ত্রী আয় করেও তিন সন্তানের পড়াশোনাসহ সংসার চালাতে টানাটানিতে পড়ে যাই। হিসাব কষে মাছ বা মাংস খেতে পারছি না। কম দামে চাষের মাছ, ব্রয়লারও এখন কিনতে হচ্ছে বহু কষ্টে। হিসাবের বাইরে গিয়ে কিনলে অন্য খরচে টান পড়ছে।