‘সেন্টমার্টিনে এমন বাতাস বাপের জন্মেও দেখি নাই’

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা তাণ্ডব চালিয়েছে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপের দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া, মাঝপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপার তিন শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে।

রোববার (১৪ মে) দুপুর থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব চলছে। বিকেল পর্যন্ত প্রবল ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি ভারি বৃষ্টি হচ্ছে।

মোখার তাণ্ডবের বিষয়ে কথা হয় সেন্টমার্টিন দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা সুলতান মিয়ার (৩৫) সঙ্গে। সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘সেন্টর্মাটিনে এমন বাতাস বাপের জন্মেও দেখি নাই!’

তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রেই প্রচণ্ড বাতাসে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। গাছপালাসহ টিনের ঘর ও কাঠের স্থাপনা ভেঙে গেছে। বেশিরভাগ স্থাপনাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঝড় থামলে তারপর বুঝতে পারব কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।’

আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত আরেক বাসিন্দা নূর হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় এমন তাণ্ডব চালাবে বুঝিই নাই। বাতাসে উড়ে যাচ্ছে সব। কী যে অবস্থা দ্বীপের, আল্লাহই জানেন। আমরা তো তাও আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। কিন্তু আমার দুইটা কুকুর ছিল। ওগো অবস্থা যে কী জানি না। খুব হাহাকার লাগছে।’

সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় তিন হাজার কুকুর আছে বলে জানায় স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়া গবাদিপশুসহ অন্যান্য প্রাণীর অবস্থা সম্পর্কেও এখনও নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না কেউ।

দুপুরের সবশেষ বুলেটিনে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, সেন্টমার্টিনের ওপর দিয়ে তীব্র ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। যার গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি, তবে বৃষ্টির পরিমাণ কম।

আবহাওয়া দফতরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ অতিক্রম করছে। আমরা ১১টার দিকে সেন্টমার্টিনে বাতাসের গতিবেগ পেয়েছিলাম ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। তবে এখন তা ১০০ কিলোমিটারের বেশি। সেখানে থাকা আমাদের কর্মীরা জানিয়েছেন, ঝড়ের কারণে সেখানকার ভবন কাঁপছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাতাসের গতি আরও বাড়বে।’

ঘূর্ণিঝড় মোখা সমুদ্র পেরিয়ে কক্সবাজারের স্থলভাগে আঘাত হেনেছে। বর্তমানে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের ওপর দিয়ে ঝড়টি অতিক্রম করছে।

এদিকে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের বরাত দিয়ে সেন্টমার্টিনে গাছচাপায় নারীসহ দুজনের মৃত্যুর যে খবর প্রকাশ করেছে, তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন ইউএনও।

তিনি সময় সংবাদকে বলেন, সেন্টমার্টিনে নারীসহ দুজনের মৃত্যুর খবর তার জানা নেই। এ বিষয়ে তিনি কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেননি বলে দাবি করেন ইউএনও কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে এখনও প্রচণ্ড বাতাস। যারা সেখানকার তথ্য দেবে তারা সবাই এখন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন, তারা আমাদের তথ্য দিতে পারছেন না।’

সন্ধ্যা নাগাদ পুরো উপকূল অতিক্রম করবে মোখা। যদিও এর অগ্রভাগের প্রভাবে শনিবার গভীর রাত থেকেই উপকূলে শুরু হয় বিরূপ পরিস্থিতি।

তবে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে আগের শঙ্কা মতো ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ। দুপুর ১টায় আবহাওয়া অফিসের সবশেষ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য তুলে ধরেন পরিচালক মো. আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, মোখার কেন্দ্রের আঘাত পড়ছে টেকনাফের ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে মিয়ানমার উপকূলে। এতে পুরো কক্সবাজার উপকূল হুমকিতে থাকলেও, বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা নেই।

এদিকে ভূ-ভাগ অতিক্রম করার পরও ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারি বর্ষণের শঙ্কা রয়েছে উপকূলে। ঝুঁকি আছে জলোচ্ছ্বাস এবং পাহাড় ধসেরও। উপকূলের দিকে ১৭ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে আসা মোখার কেন্দ্রের চারপাশে বর্তমানে বাতাসের গতি ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া দফতর কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকত দেখিয়ে যেতে বলেছে।

এছাড়া উপকূলীয় আরও ১১টি জেলায় বহাল থাকছে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত।

ঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপর, ভোলাসহ উপকূলীয় ১০ জেলায় ৫ থেকে ৭ ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।