ঘূর্ণিঝড় মোখা: নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মোংলা বন্দরে ৬ যুদ্ধজাহাজ

ঘুর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মোংলা বন্দরের জন্য ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। কিন্ত অন্যান্য বন্দরে ৮ ও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত চলমান রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি চট্রগ্রাম, কক্সবাজার জেলা ও মিয়ানমারের ওপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

মোখার প্রভাব থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চট্রগ্রাম থেকে মোংলা বন্দরে জেটিতে এসেছে নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ডের ছয়টি যুদ্ধজাহাজ। আর খাদ্য সহায়তা নিয়ে প্রস্তুত হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

শনিবার (১৩ মে) সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব শুরু হয়েছে চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায়। শুরু হয় ঝোড়ো হওয়া ও মুষলধারে বৃষ্টি। সেখান প্রশাসন ও সেচ্ছাসেবকরা আগে থেকেই শুরু করেছে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার তৎপরতা। তাই নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চট্রগ্রাম থেকে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের যুদ্ধ জাহাজগুলো ধাপে ধাপে মোংলা বন্দর জেটিতে এসে পৌঁছায়।

নিরাপদে আশ্রয় নিতে আসা নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজগুলো হলো ‘বিএনএস বঙ্গবন্ধু’, ‘বিএনএস প্রত্যাশা’, ‘বিএনএস প্রত্যয়’ ও ‘বিএনএস স্বাধীনতা। এছাড়া, চট্রগ্রাম কোস্টগার্ডের যুদ্ধজাহাজ ‘বিসিজিএস তাজউদ্দিন’ ও ‘বিসিজিএস সৈয়দ নজরুলও মোংলা বন্দরে এসেছে।

মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শাহিন মজিদ সময় সংবাদকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে এসব জাহাজ বন্দরের জেটিতে নিরাপদে নোঙ্গর করেছে। দুর্যোগ কেটে গেলে পুনরায় এ জাহাজগুলো গন্তব্যে ফিরে যাবে বলেও জানান তিনি।

শনিবার সকাল থেকেই মোংলাসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছে নৌবাহিনী। এছাড়া দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত রয়েছে নৌবাহিনীর ২১টি জাহাজ, হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট (এমপিএ)।

সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় দ্রুততম সময়ে জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ এবং চিকিৎসা সহায়তার জন্য এসব জাহাজ ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উপকূলীয় দূর্গম এলাকাগুলোর জন্য নৌ কন্টিনজেন্ট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনায় নৌবাহিনীর এমপিএ ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এমপিএ ও হেলিকপ্টারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জাহাজ ও কন্টিনজেন্টসমূহ বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা চালাবে।

প্রথম ধাপে উদ্ধার কাজের জন্য বানৌজা সমুদ্র জয় ও ধলেশ্বরী-কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ এলাকায়, বানৌজা শাপলা-কুতুবদিয়া ও বহিঃনোঙ্গর এলাকায়, বানৌজা হাতিয়া এবং এলসিটি ১০৩-সন্দীপ ও হাতিয়া সংলগ্ন এলাকায়, এলসিভিপি ১১-পটুয়াখালী এলাকায় ও এলসিটি ১০৫-পিরোজপুর ও বরগুনা এলাকায় নিয়োজিত থাকবে।

এছাড়া খুলনার মোংলায় বানৌজা শৈবাল, বঙ্গবন্ধু, প্রত্যয়, স্বাধীনতা, প্রত্যাশা, নির্মূল জরুরি অনুসন্ধান ও উদ্ধারের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের পাগলায় বানৌজা অপরাজেয়, অতন্দ্র, সুরভী, অদম্য ও পদ্মা প্রস্তুত রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী দুর্গত এলাকাগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সহায়তায় বিশেষ মেডিকেল টিম জীবন রক্ষাকারী ঔষধ, স্যালাইন ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবে। ঝড়ের তীব্রতা ও আঘাতের প্রকোপ পর্যবেক্ষণের পর দ্বিতীয় ধাপে নৌবাহিনীর অতিরিক্ত জাহাজ এবং কন্টিনজেন্টসমূহকে মোতায়েন করা হবে।