রোজায় খাদ্যাভ্যাস ও সুস্থতায়-এর প্রভাব

পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখার ফলে ও রুটিনমাফিক চলার কারণে রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমাতে এবং প্রদাহ কমাতে কার্যকরী। বেশকিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকার ফলে শরীরের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, যার মধ্যে রয়েছে উন্নত রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ, ওজন হ্রাস এবং প্রদাহ হ্রাস। আমাদের দেশে যেখানে জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রমজান মাসে রোজা পালন করে, সেখানে শরীরের উপর রোজা রাখার ইতিবাচক প্রভাব ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ। এটি একজন রোজাদারকে এই ধর্মীয় অনুশীলনের সময় একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও মননকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করে।

রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ:
রোজার সময়, শরীর গ্লুকোজের পরিবর্তে শক্তির জন্য সঞ্চিত চর্বিক্ষয় করে, এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাসের দিকে পরিচালিত করে, যা টাইপ-ডায়াবেটিসের বিকাশকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। রমজানে রোজা রাখার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায় ও অতিরিক্ত চর্বি কমে কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।

ওজন হ্রাস:
রোজা ওজন কমানোর একটি কার্যকর উপায় হিসেবেও প্রমাণিত, শরীর যখন শক্তির জন্য সঞ্চিত চর্বিক্ষয় করে, তখন এটি শরীরের চর্বিহ্রাসের দিকে নিয়ে যায়। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যারা রমজান মাসে রোজা রেখেছিলেন তারা মাসে গড়ে কেজি ওজন হ্রাস করেছেন। ওজন হ্রাস অনেক সময় ক্যান্সার হওয়া খেকেও রক্ষা করে।

প্রদাহ হ্রাস:
রোজা শরীরের প্রদাহ কমাতে দেখানো হয়েছে। প্রদাহ হৃদরোগ এবং ক্যান্সার সহ বেশ কয়েকটি দীর্ঘস্থায়ী রোগের সঙ্গে যুক্ত। সৌদি আরবে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে রমজান মাসে রোজা রাখার ফলে শরীরে প্রদাহের চিহ্ন কমে যায়। রোজায় খাদ্যাভ্যাস:

খেজুর:
খেজুর শক্তির একটি উত্তম উৎস যা মুসলিম ধর্মগ্রন্থে নানা সময়ে উঠে এসেছ।

খেজুরে রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেমন ফাইবার, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। খেজুর রোজায় ইফতার পণ্য হিসেবেও ঐতিহ্যবাহী খাবার। আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘মুমিনের শ্রেষ্ঠ সেহ্‌রি হলো খেজুর।’ আবুদাউদ আনাস (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) নামাযের পূর্বে কিছু আধা-পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তা না পেলে পূর্ণপাকা (শুকনা) খেজুর দিয়ে এবং তাও না পেলে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে নিতেন।

বিশুদ্ধ পানি পান:
রোজা রাখার সময় হাইড্রেটেড থাকা জরুরি। পানীয় জল এটি করার সর্বোত্তম উপায়। নানা ধরনের শরবতও বেশ তৃপ্তিদায়ক পানীয়। তবে চিনি গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি খেজুর পায়, সে যেন তা দিয়ে ইফতার করে। যে ব্যক্তি তা না পায়, সে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কারণ, তা হলো পবিত্র।’ সহীহুল জামেউস সাগীর ৬৫৮৩

আঁশযুক্ত শস্য:
আশযুক্ত শস্য যেমন বাদামী চাল এবং বাদামী গমের রুটি, ফাইবার এবং জটিল কার্বোহাইড্রেটের একটি ভালো উৎস।

চর্বিহীন প্রোটিন:
চর্বিহীন প্রোটিন, যেমন মুরগি, মাছ এবং মটরশুঁটি, নানা ধরনের ডাল, টক দই শক্তির একটি ভালো উৎস এবং পেশী ভর বজায় রাখতে সাহায্য করে।

শাকসবজি:
মৌসুমি শাক-সবজি ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজগুলোর একটি ভালো উৎস। এগুলো প্রতিটি খাবারে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

দেশীয় ফল:
ফল শক্তি এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির একটি ভালো উৎস, যেমন তরমুজ, বরই, কলা, বেল, ডাব।

বাদাম এবং বীজ:
বাদাম এবং বীজ স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিনের একটি ভালো উৎস।

লেখক: সরদার হোমিও ক্যান্সার চিকিৎসক, সরদার হোমিও হল ৬১/সি, আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। সেল: ০১৭৩৭৩৭৯৫৩৪